
রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এদের মধ্যে রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ সংগঠক ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সেলের সদস্য। চাঁদাবাজির ঘটনায় গুলশান থানা পুলিশের হাতে আটক পাঁচজনের মধ্যে রিয়াদও আছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সেল সম্পাদক (দপ্তর) মাহফুজুর রহমানের দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে কতিপয় ব্যক্তি সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গেলে সেখানে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়।
গঠনতন্ত্রের ধারা ৩.১ অনুযায়ী, সংগঠনের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্য সচিব জাহিদ আহসানের নির্দেশনায় জানে আলম অপু ও আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সব পর্যায়ের দায়িত্ব ও সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ অনুরোধ জানায়।
চাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন ও সাদাব।
শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কার আদেশের বিষয়ে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।
সেখানে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে কোনোরকম সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা দেন।
বহিষ্কারের পর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জানে আলম অপু। তিনি লেখেন, প্রথমত আমি গ্রেফতার হইনি, দ্বিতীয়ত আমি কোথাও চাঁদাবাজিও করিনি। আজকের (শনিবার) গুলশানের ঘটনায় আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না।
বেশ কিছু নিউজ মিডিয়া আমার নাম জড়িয়ে নিউজ করেছে। অনেক জায়গায় ছড়িয়ে গেছে আমি গ্রেফতার হয়েছি।
যেই ভিডিওটাকে চাঁদাবাজির ভিডিও দাবি করা হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা দিবো মিডিয়ার সামনেই।
প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছি উল্লেখ করে অপু লেখেন, এত এত মানুষের কল, মেসেজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি, সব মিলিয়ে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লাম। কিছু মিডিয়ার আংশিক নিউজ প্রচারের ফলে আমাকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আমাকে একটু স্থির হবার সুযোগ দিন প্লিজ, আমি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিবো এবং আমার দ্বারা যদি অপরাধ ঘটে থাকে তাহলে আমি তার জন্য প্রাপ্য শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কোনোরকম অনৈতিক কাজকে প্রশ্রয় দেয় না’ উল্লেখ করে অপু বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার সাথে সাথেই কোনো কালক্ষেপণ ছাড়াই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমার নামের সাথে ছাত্রসংসদের নামটাও প্রচার হওয়ায় ছাত্রসংসদকেও ব্যাশিং করা হচ্ছে। উক্ত ঘটনায় ছাত্রসংসদের বিন্দু পরিমাণ দায় আছে বলে আমার মনে হয় না। ছাত্রসংসদ কোনোরকম অনৈতিক কাজকে প্রশ্রয় দেয় না, আমি নিজের বহিষ্কার আদেশকে স্বাদরে গ্রহণ করে ছাত্রসংসদের এই জিরো টলারেন্স নীতিকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। বিস্তারিত জানাবো খুব শীঘ্রই, একটু সময় দিন প্লিজ।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন আবু জাফর (সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের স্বামী) নামে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর বাসা থেকে গত ১৭ জুলাই ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তারা বলে পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে গ্রেফতার করাবে। এই ভয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দেন ভুক্তভোগী। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু জাফর আগে আওয়ামী লীগ করতেন।
এ সময় এই প্রবাসী জানান, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। তিনি কোনো রাজনীতির মধ্যে এখন নাই, দেশে এসেছেন বেড়াতে। এরপরও তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা নেয় চাঁদাবাজরা। এরপরও ভুক্তভোগী আবু জাফর পুলিশকে জানাননি।
এর দুইদিন পর বাকি ৪০ লাখ টাকা নিতে চাঁদাবাজরা ওই বাসায় আবার যায়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদের নেতৃত্ব ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এরপর আবু জাফর পুলিশকে জানালে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতেনাতে পাঁচ চাঁদাবাজকে আটক করে।
আটকরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, জ্যেষ্ঠ সংগঠক ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সেলের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, সদস্য মো. সিয়াম ও সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম।
আটকদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। যাচাই-বাছাই করে পরে জানানো হবে। আটকদের মধ্যে চারজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং একজন একটি কলেজের শিক্ষার্থী।
চাঁদাবাজির ঘটনায় ওই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রুজু করা হবে বলেও জানিয়েছেন গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান।
আজকালের খবর/বিএস