পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাউয়াজানি ও মুন্সিবাজার এলাকায় নতুন করে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি।হুমকির মুখে পড়েছে কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, বসতভিটা ও সরকারি স্থাপনা।
আজ বুধবার সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজারে সরেজমিনে পদ্মা নদীর ভাঙন কবলিত স্থানে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজার এলাকার পদ্মা নদীর পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত তিন দিনে ভাঙনে প্রায় ৫০ বিঘা কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্কুল, কবরস্থান, ঈদগাহসহ কয়েকশ বাড়িঘর।ভাঙন দেখতে স্থানীয়রা নদীর পারে ভিড় জমিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে শত শত পরিবার নদীর পারে এখন দিন কাটাচ্ছে। জমিতে লাগানো পাট কাঁচা অবস্থায় কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, তিন দিন ধরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের দাবি আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাবে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে। এখানে ৪টি প্রাইমারি স্কুল, ৪টি মসজিদ আছে। এই নদী ভাঙন বন্ধ না করা গেলে সব ভেঙে যাবে। ২৫ বছর ধরে নদী এখানে ভাঙছে। এ পর্যন্ত যে সব সরকার এসেছিল তারা নদী বাঁধার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয় নাই। আমরা ড. ইউনুস সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি সাময়িকভাবে আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে।
পদ্মায় পাটক্ষেত বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লোকমান সরদার বলেন, গত ৩/৪ দিনে আমার ৫বিঘা জমি পদ্মার বিলীন হয়ে গেছে। একটু একটু জমি রয়েছে সেটাও নদীতে চলে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব। আমরা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি যতদ্রুত সম্ভব আপাতত ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা করুক।
ফরিদ সরদার, আজিজ সরদার, জিয়াউর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, জিল্লু, আজিজুল, মোনাফ আলী সরদারসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে নদী ভাঙন হচ্ছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যখন যে এমপি হয় সে আশ্বাস দেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ভাঙনে এই এলাকার শত শত বিঘা কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেই। নতুন করে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, বাজার। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, আমি সরজমিনে ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। এখানে কিছু পাটের জমি ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এর পাশেই আগাম আমন ধান রোপণ করা হয়েছে সেগুলোই হুমকির মুখে রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ প্রশাসনসহ সকল কর্মকর্তারা এ বিষয়টি ওয়াকিবহাল রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করতে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া প্রয়োজন সেই ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারটিও আমরা ভাবব।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। বর্ষাকালে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। এর মধ্যে চলতি বর্ষাকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজার এলাকায় কিছু কৃষি জমি ভাঙন কবলিত রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। গোয়ালন্দের ইউএনও এ বিষয়ে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পত্র প্রেরণ করেছেন। আমারাও ওই পত্রের রেফারেন্স ধরে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রকল্পের জন্য পত্র দিয়েছি। প্রকল্পের অনুমোদন পেলেই আমরা এসব জায়গায় কাজ শুরু করব।
আজকালের খবর/ এমকে