কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ'র মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টকে কেন্দ্র করে ফের আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সূত্র মতে গত বুধবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা।
সোমবার (২১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের তথ্য ছড়িয়ে পড়লে বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে নতুন কর্মসূচি দিয়ে মাঠ ছাড়লেন তারা। তাদের দাবি- এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সাজিদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম লাশের ময়নাতদন্ত করেন। প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী- ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে প্রায় ৩০ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয় সাজিদের। ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় প্রাথমিক ময়নাতদন্ত করলে ১৬ জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ তথ্য ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ‘এত রাতে স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না’ বলে ফের আন্দোলনে নেমে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকেল চারটার সিডিউল বাস আটকে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া-সহ বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্রসংগঠন।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা দাবি- পূর্ব ঘোষিত ১৫ দফা দাবির সঙ্গে আরও কিছু দাবি যুক্ত করা হয়। এসময় ঘোষণা করেন- সাজিদ হত্যাকাণ্ড ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক বিচার সম্পন্ন করা, বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করা, বিশ্ববিদ্যালয় সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দেওয়া, মামালার তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়া, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণরূপ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচেকানাচে ও প্রতি হলের প্রতি ফ্লোরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ইত্যাদি।
দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল (২২ জুলাই) সকলকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সকাল ১১ টায় আন্দোলনের ডাক দেন তারা। পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে পাশে থাকার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
ইবি থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, আন-অফিসিয়াল প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে সরাসরি হত্যাকাণ্ড কিংবা সাধারণ মৃত্যু কি-না স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়নি। ওখানে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট আসলে তখন চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এর পরবর্তী ধাপে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে।
বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ধাপে কাজের দীর্ঘসূত্রতা উপলব্ধি হলে বিচার বিভাগীয় অধীনে আরেকটি কমিটি গঠন করতে পারে। যেহেতু বিষয়টা অস্পষ্ট, সুতরাং এখন বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন মনে করলে এগাতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করার ব্যাপারে তিনি বলেন, যদি চূড়ান্ত রিপোর্টে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে আসে তাহলে নিয়মিত মামলা করা যাবে। এ মামলা ওই শিক্ষার্থীর পরিবার অথবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারবে। তবে একই বিষয়ে দুইটা মামলা হয় না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান জানান, প্রক্টরিয়াল বডি, আল কুরআন বিভাগ, সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সাথে বসে আলোচনা হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে কালকের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সাজিদের ইস্যুতে পরবর্তীতে৷ ক্রিয়াশীল সংগঠনের সমন্বয়ে এবং আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে কর্মসূচি দিবে। গত দুই দিন ধরে শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা নিছক দুর্ঘটনা না-কি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাজিদ শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
আজকালের খবর/ এমকে