প্রকাশ: শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫, ১২:২০ এএম

রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসময় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি জানান তারা।
জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এরমধ্যে রাত ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
মিছিলটি রায়সাহেব বাজার ও তাঁতিবাজার অতিক্রম করে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যায়। পরে আবার তাঁতিবাজার ও রায়সাহেব বাজার হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা চাঁদার জন্য ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিল
অপরদিকে রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদল। এসময় তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। মিছিলটি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রোকেয়া হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা এ ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটি দেখে আমরা মর্মাহত, লজ্জিত এবং শঙ্কিত। আমরা বার বার বলে এসেছিলাম যে, বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সে যদি দলের হয়, তাহলে সে দলীয় সন্ত্রাসী, সে যদি ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় করে তাহলে ব্যক্তিগত অন্যায়।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সাইন্সল্যাব-নীলক্ষেতে মিছিল
এছাড়া ঢাকা কলেজেও বিক্ষোভ হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি ও ফ্যাসিবাদ রুখে দেওয়ার ঘোষণা দেন। রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা কলেজের হল পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। এরপর সাইন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরপর মিছিলটি সোহরাওয়ার্দী মোড় হয়ে আলাওল এবং এএফ রহমান হলের সামনে দিয়ে আবারো জিরো পয়েন্টে এসে বক্তৃতার মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মিটফোর্ডে চাঁদার জন্য ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে যুবদল নেতাকর্মীরা। দেশের ছাত্রসমাজ বিএনপি ও তাদর অঙ্গ সংগঠনের অপকর্মকে আর সহ্য করবে না। বাংলাদেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ এই খুনিদের বিচার চায়।
বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, আমরা দেখতে পেরেছি একটা দল গত ১০ মাসে ১০০ খুন করেছে। এমন বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে জুলাইয়ে আন্দোলন করেছি তা বৃথা যেতে দেবো না। নতুন করে শপথ নেওয়ার সময় এসেছে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস এবং খুনিদের ঠিকানা হবে না।
টাঙ্গাইলে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়
টাঙ্গাইলেও এ হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নান হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এসময় তারা ‘পাথর মেরে করে খুন, যুবদলের অনেক গুন’, ‘আমার সোনার বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই, চাঁদাবাজের ঠিকানা এই বাংলা হবে না’-এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
আজকালের খবর/ এমকে