‘এই রাষ্ট্রে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই। আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আছেন শুধু আপনারা। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা এবং তরুণরা। আমরা শুধু আপনাদের ভরসায় রাজপথে নেমেছি, রাজপথে আছি। আমরা বলেছি, আমাদের জীবনের মায়া নেই। আমরা দেখেছি, আমাদের সামনে শহীদ হয়েছে আমার ভাইয়েরা। যখন ওই শহীদ পরিবারের সামনে দাঁড়াই; তখন মনে হয়, এ জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করার জন্য বেঁচে রয়েছি।’
বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জে জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার পতনে অনেকেই আমরা একসঙ্গে ছিলাম। কিন্তু, আদর্শের এখন মিল নেই। অনেকেই আছেন শুধু নির্বাচনে গিয়ে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য। আমরা এজন্য শেখ হাসিনার পতন করিনি। মুজিবের সংবিধান দিয়ে আর বাংলাদেশে আর চলবে না। জনগণের ও ইনসাফের নতুন সংবিধান দিয়ে বাংলাদেশ চলবে।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা অনেক আগেই জানিয়েছিলাম, গোপালগঞ্জে প্রোগ্রাম করবো। কিন্তু সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না করার কারনেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করেছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা জীবনের কোনো মায়া করি না। যখন শহীদ ভাইদের মুখ দেখি তখন ভাবি; আমরা বেঁচে আছি। শুধু তাদের অধিকার আদায়ের জন্যে আমরা বেঁচে আছি। আমরা জীবনের পরোয়া করি না। ইনসাফের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, চাঁদাবাজমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নতুন বাংলাদেশে কোনো একক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকবে না। গোপালগেঞ্জের আর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে থাকবে না। আমাদের ওপর আক্রমণ আমাদের শক্তি দ্বিগুণ করেছে। আমরা গোপালগঞ্জে আবার যাবো। সেখানকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এনসিপির নেতাকর্মী যাবে। তবে সেটা ভয়ভীতি দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে।
নির্বাচনমুখী একটি দলকে উদ্দেশ্য করে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমরা কেন গোপালগঞ্জে গেলাম; তা নিয়ে তারা প্রশ্ন করেছেন! আওয়ামী লীগ যদি মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে; বিপ্লবী ছাত্র-জনতা আবার তাদের পরাস্ত করবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গোপালগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে প্রোগ্রাম করবো, ইনশাআল্লাহ।
বিগত সময় সাধারণ মানুষ, ছাত্র-আলেমদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু ইসলাম পালনের কারনে জুলুম করা হয়েছে। হিন্দু সনাতন ভাইদের বলবো, আপনারা কোনো বিশেষ দলের সম্পদ নয়, আপনারা বাংলাদেশের জনগণ। সমান অধিকার ভোগ করেন। আওয়ামী লীগই হিন্দুদের জমি দখল করেছে।
মানিকগঞ্জ জেলা এনসিপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান তালুকদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ন আহ্বায়ক হায়দার, সিনিয়র যুগ আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন বলেন, আমরা যখনই সংস্কার করতে চাই; তখন একটি পক্ষ সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ক্ষমতা চায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এ দেশের বিচারব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা এখনও জনগণের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেনি। এতোগুলো প্রাণ নেওয়ার পরও আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা যারা বলছেন, তারা দেখুন, গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসীরা এখনও সক্রিয়। গোপালগঞ্জে বিপ্লবীদের ওপর হামলার পর আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছি, এ দেশের আর আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। মুজিববাদের কবর রচনা হবে।
সিনিয়র যুগ আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর যে কয়টি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো; তার একটিও তারা করেনি। এই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী ম্যান্ডেট দিয়েছে। নির্বাচনের জন্য আমার আন্দোলন করেনি। আমার আওয়ামী লীগকে তাড়িয়ে বিএনপিকে আনবো; এজন্য আন্দোলন করিনি। আমার গণঅভ্যুত্থান করেছিলাম পুরো রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করার জন্য।
আজকালের খবর/ এমকে