
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের লুদুরিয়া গ্রামে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের জমি জোরপূর্বক দখল করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, আমরা অভিযোগ পেয়েছি, মামলা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছি, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ক্লেমেন্ট ডি কস্তা জানান-তার পিতা হেনরি কস্তা ১৯৮৯ সালের ৭ অক্টোবর দলিল নং ৬৯১১ ও ৬৯১২ মূলে সুজাপুর মৌজায় এসএ ৩৩ ও ৩৭, আরএস ১০ ও ১১ নং খতিয়ানভুক্ত ১০৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরে তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণ ওই সম্পত্তির দখল ও খাজনা খারিজ সম্পন্ন করেন। পরিবারের সম্মতিক্রমে হেনরি কস্তার পুত্র ক্লেমেন্ট ডি কস্তা সম্পত্তির মালিকানা পান এবং সেখানে লেবু ও আকাশমনি গাছের বাগান স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে ছিলেন।
ক্লেমেন্ট ডি কস্তা অভিযোগ করেন, একই উপজেলার বিরুওয়া নলছটা গ্রামের নিরঞ্জন চন্দ্র দাসের ছেলে হৃদয় চন্দ্র দাস ২০২০ সালে একটি ‘আম-মুক্তারনামা দলিল’ (নং-৯৭২৫) দেখিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, সেই সময় হৃদয় চন্দ্র দাস তার জমির প্রায় ২০০টি আকাশমনি গাছ কেটে নিয়ে যায়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, গাজীপুর জেলা জজ আদালত ২০২৩ সালে হৃদয় চন্দ্র দাসের ‘আম-মুক্তারনামা দলিল নং-৯৭২৫’ বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর ক্লেমেন্ট কস্তার পরিবার পুনরায় জমিতে দখল নিয়ে বাগান পরিচর্যা শুরু করেন।
গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ দুপুরে ক্লেমেন্ট ডি কস্তা ও লরেন্স কস্তা বাগানে কাজ করার সময় হৃদয় চন্দ্র দাস ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালায়।
এ সময় প্রাণভয়ে ক্লেমেন্ট ও তার পরিবার পালিয়ে গেলেও বাগানে কাজ করা তিন শ্রমিক-(১) নাসির শেখ, (২) পরিমল মণ্ডল, (৩) ইন্দ্র মণ্ডল—কে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে পরিমল মণ্ডলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এবং নাসির শেখকে ডিভাইন মারসি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী শংকর রোজারী বলেন, হৃদয় চন্দ্র দাস সন্ত্রাসী নিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করতে আসে। প্রতিবাদ করায় তিন শ্রমিককে কুপিয়ে জখম করে।
এ ঘটনায় লরেন্স কস্তা বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় (১) হৃদয় চন্দ্র দাস, (২) নির্মল চন্দ্র দাস, (৩) নিরঞ্জন চন্দ্র দাস, (৪) জাকির কাজী, (৫) জয় বকুল, (৬) মাসুম, (৭) রিপন দাস, (৮) লিটনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক আশ্রয়ে হৃদয় চন্দ্র দাস দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হৃদয় চন্দ্র দাস বলেন, তাদের সঙ্গে আমার জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তারা আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি, মারধর ও হামলার কথা অস্বীকার করেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আলাউদ্দিন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আজকালের খবর/ এমকে