সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫
‘ওয়েজ ওয়ার’ রপ্তানি: আনন্দ শিপইয়ার্ডের বৈশ্বিক বাজারে নুতন অবস্থান সৃষ্টি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৩৮ পিএম
বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড়’ জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড তুরস্কের ‘নোপাক শিপিং’ নামের প্রতিষ্ঠানের নিকট ‘ওয়েজ ওয়ার’ নামক জাহাজ রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানটি তুরস্কের জন্য নির্মিত ৫ হাজার ৫০০ ডেডওয়েট টন ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক মাল্টিপারপাস ভেসেলটি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণশিল্পে নতুন মাইলফলকের সূচনা করে।

‘ওয়েজ ওয়ার’ রপ্তানির পর আনন্দ শিপইয়ার্ড বৈশ্বিক বাজারে কেমন অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তৈরি জাহাজ ‘ওয়েজ ওয়ার’ রপ্তানির মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক বছরের বিরতির পর নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছি। ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি অর্ডারের বিষয়ে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে ক্রেতাদের সাথে।

বিদেশি ক্রেতারা প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি মান, সময়মতো সরবরাহ এবং প্রতিযোগিতামূলক খরচে সন্তুষ্ট হয়েছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আনন্দ শিপইয়ার্ড প্রমাণ করতে পেরেছে যে, বাংলাদেশ শুধু অভ্যন্তরীণ নৌযান নয়, উচ্চমানের ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ রপ্তানিতেও সমানভাবে সক্ষম, বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে, বলে তার মত।

তিনি আশা করেন, এ অভিজ্ঞতা আমাদের ভবিষ্যতে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আরো বিস্তৃতির সুযোগ তৈরি করেছে।

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হলে বাংলাদেশের জাহাজশিল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে সঠিক কর্মপরিবেশ। এছাড়া এই শিল্পে নগদ সহায়তা, শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি সুবিধা, পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের উন্নয়ন, স্বল্প সুদে ঋণ, মূলধন জোগান, পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে জাহাজ রপ্তানি শিল্প এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি খাতে পরিণত হবে। সেই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে এই খাতে ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

ড. তারিকুল ইসলাম মনে করেন, আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ বৈশ্বিক জাহাজ রপ্তানি বাজারে আরো শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে।

জাহাজ নির্মাণশিল্পের সম্প্রতি এক সেমিনারে আইবিএফবির পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এই শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমরা ভারত, ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে দরকার কৌশলগত নীতি ও ব্যাংকগুলোর আর্থিক সহযোগিতা।’

ড. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়েজ ওয়ার’-এর অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আমরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে জাহাজ সরবরাহ করতে পারি। যদি সরকারি নীতি সহযোগিতার বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং সাপোর্ট এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় যৌক্তিক রপ্তানি প্রণোদনা বৃদ্ধি পায়, তাহলে বাংলাদেশ আগামী দশকে জাহাজ রপ্তানির বড় একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। আনন্দ শিপইয়ার্ড এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণশিল্প

বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানি শুরু করে। প্রথম জাহাজটি রপ্তানি হয় ডেনমার্কে। সেটি ছিল অত্যাধুনিক কনটেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মারিস’। ওই জাহাজটিও রপ্তানী করে আনন্দ শিপইয়ার্ড লিমিটেড।

দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প আর আনন্দ শিপইয়ার্ড একই সূতেয় গাঁথা। প্রতিষ্ঠানটির একনিষ্টতায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উদীয়মান জাহাজ নির্মাণকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মান মেনে চলা এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।

বর্তমানে দেশে ৩০টিরও বেশি বড় শিপইয়ার্ড রয়েছে, যার কয়েকটি সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ রপ্তানি করছে। এশিয়ার জাহাজ নির্মাণ শিল্পে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পর বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অবস্থান শক্ত করছে। মাঝারি আকারের কার্গো ভেসেল, কনটেইনার জাহাজ, ট্যাঙ্কার ও ড্রেজার নির্মাণে ক্রমশ সুনাম অর্জন করছে বাংলাদেশ।

যদিও মূল গুরুত্ব এখনো দেশের চাহিদা মেটানো, গত এক দশকে জাহাজ রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জ্বালানি পরিবহনের প্রায় ৯০ শতাংশ, কার্গো পরিবহনের ৭০ শতাংশ এবং যাত্রী পরিবহনের ৩৫ শতাংশই সম্পন্ন হয় জলপথে। এ বিপুল চাহিদা পূরণে বিভিন্ন আকারের প্রায় ৩০০টি শিপইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। তবে এরমধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ করছে, যেখানে কাজ করছেন প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১০০টিরও বেশি জাহাজ নির্মাণকারী কোম্পানি এবং ১২০টির বেশি নিবন্ধিত শিপইয়ার্ড রয়েছে। তবে উদ্যোক্তাদের হিসাব মতে সক্রিয় শিপইয়ার্ডের সংখ্যা প্রায় ৩০০।

দেশের অভ্যন্তরীণ জাহাজের বাজার প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে, যেখানে রপ্তানি তুলনামূলক ধীর গতিতে বছরে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বার্ষিক বাজারমূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।

বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২০টি জাহাজ রপ্তানি করতে পারে। এ খাতে শ্রমব্যয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে শ্রমব্যয় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম—যেকারণে স্পষ্টতই বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
সোনার দাম আরও বাড়ল, ভরি ছাড়াল ২ লাখ ১৭ হাজার
পিআর নিয়ে নাহিদ ইসলামের বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর
৪৯তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ
পুরান ঢাকায় জবি ছাত্রদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
গাজা যুদ্ধের নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ’ করার প্রস্তাব নেতানিয়াহুর!
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গৌরনদীতে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
১০০ বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিল অক্সফোর্ডএকিউএ
প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান, শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা
শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের তিনদিন অতিরিক্ত ফ্লাইটের চার্জ মওকুফ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft