প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি/পূজার সময় এল কাছে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার মতোই চলে এলো পূজা। আমার ছোটবেলা কাটে মা দুর্গার আতুরঘর বলে খ্যাত কলকাতায়। তার মানে হলো- সারা বিশ্বে দুর্গাপূজার সব চেয়ে বড় উৎসব হয় কলকাতা শহরে। আর বাঙ্গালীদের কাছে দুর্গাপূজা একদম আলাদা অনুভূতি, আবেগ ও প্রাণের উৎসব। বছরে একটি উৎসবকে ঘিরে কত আয়োজন! সুদূর প্রবাস থেকে পরিবারের কাছে ফেরা।
মা দুর্গার সাথে সাথে নিজের মায়ের কাছে বসে মায়ের ছোটবেলা, আমাদের ছোটবেলা নিয়ে সে কত গল্প! সারা রাত ধরে পূজা মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখা। নতুন জামা-কাপড়, কত হরেক রকমের খাবার! জীবনের মহা আনন্দের সময় এই দুর্গাপূজা।
কিন্তু প্রায় চার বছর হল আমি সেই কলকাতা ছেড়ে বিদেশের মামাটিতে পা রেখেছি। কলকাতার মতো দুর্গাপূজার সময় এখানেও গাছের পাতার রং পাল্টায়, শরত ঋতু এসে হাতছানি দিয়ে যায়। তবে মেঘ এখানে সব সময় গভীর থাকে। মেঘের মন ও মুখ দুই ই ভার হয়। বছরের যে চারটি দিনের জন্য ফ্রাঙ্কফুর্টের বাঙালিরা অপেক্ষা করে থাকেন, সেই শারদ উৎসব কার্যত দরজায় এসে গেলো।এই বছরও ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে রসবাখের চক্রবর্তী বাড়ির পূজা পায়ে পায়ে পাঁচ বছর পুরন করছে।
এটি আদতে বাড়ির পূজা। বাঙালীআনা এবং প্রবাসে বাঙালী সংস্কৃতি ধরে রাখতে ২০২০ সালে এই পূজার শুরু। এই বছর পায়ে পায়ে পাঁচ বছর ধরে এই পূজা এগিয়ে চলেছে। এই পূজার বিশেষত্ব হল- প্রত্যেকটি মানুষ নিজেরা পূজার কাজে মনোযোগ দেয়। সে জন্যেই মনে হয় এটি সকলের পূজা। এটি একটি ঘরোয়া পূজা। তাই আন্তরিকতা ও ভালোবাসা, সহযোগিতা , নিষ্ঠা ভরপুর। এই পূজা পক্ষপাতমুক্ত। পূজা কমিটি বলে কিছু নেই। যে কোনো ধর্মাবলম্বী মানুষ এই পূজায় অংশ নিতে পারে।
পূজার চারটি দিন, তিথি নির্ঘন্ট মেনেই পূজা হয়। সন্ধি পূজা, অঞ্জলি , নিত্য চন্ডীপাঠ, কলাবউ স্নান , নবমীতে কুমারী পূজা , সিঁদুর খেলা ও মায়ের দর্পনে বিসর্জন সবই পালন হবে। বাড়ির পূজায় পুরোহিতের ভূমিকা পালন করবেন বাড়ির কর্তা সপ্তর্ষি চক্রবর্তী।এই বাড়ির পূজার একটি ইতহাস আছে। বাড়ির গিন্নি শতাব্দী চক্রবর্তী তাঁর মা স্বর্গীয়া বিদিশা বসু স্বপ্ন দেখেন তাঁর মেয়ের জার্মানির বাড়িতে দুর্গা দালান হবে। এছাড়া কোভিডের সময়ে ফ্রাঙ্কফুর্টে বারোয়ারী পূজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, প্রথম অনলাইন স্ট্রিমিংয়ে পূজা শুরু করেন এই বাড়ির সদস্যরাই। সেই থেকে এই পূজা চলছে। পূজার তিন মাস আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। এই পুজোর প্রতিমা বানিয়েছেন কলকাতার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী অসীম ভৌমিক।
এখানে খুব সুন্দর আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা করা হয়। এই বছরের বিশেষ আকর্ষণ শ্রুতিনাটক ও শাস্ত্রীয় নৃত্য । পঞ্চমীতে আগমনী গান দিয়ে পুজো শুরু হবে। বাড়ির মহিলারা মিলে লোক নৃত্য পরিবেশন করবেন।
প্রবাসের এই পুজোয় শুধুমাত্র ভারতীয়রা নন, জাতি,ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে জার্মান , আফ্রিকান, মারোয়াড়ী , গুজরাটি সবাই সামিল হবেন। প্রতিবেশী দেশ যেমন -নেদারল্যান্ডস্, স্পেন, অস্ট্রিয়া,বেলজিয়াম ও জার্মানির বিভিন্ন শহর থেকেও লোক সমাগম হয় এই পূজায়। পাকশালার দায়িত্বে আছেন বাড়ির মেয়েরা ,বউরা, এমনকি বন্ধুরা এসে ও সাহায্য করেন।
খিচুড়ি থেকে লাবড়া, ইচোঁড়ের ডালনা, পটলের দোলমা, দশমীতে থাকে বাসন্তী পোলাও আর খাসির মাংস দিয়ে পূজা শেষ হয়। শেষ পাতে অবশ্যই চাটনী ও পায়েস থাকবেই। পূজা এলে বিদেশের মাটিতে একটি সংহতির রূপ ফুটে ওঠে। বাঙালি সসংস্কৃতির সুরে ,ঢাকের তালে আর পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রে গলা মেলান সবাই। এই ভাবেই রসবাখের বাবাঙালি মেতে উঠবেন পূজায়।
আজকালের খবর/আরই