রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্ট ইউনিয়নের বিলজোনা গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি শান্তিরাম মন্ডল ও গুরুদাসী মন্ডল স্থানীয় মন্দিরের জন্য চার শতাংশ জমি দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মন্দির কমিটি তাদের ভুল বুঝিয়ে পুরো ১০ শতাংশই লিখে নেয়। বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগীরা ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেন। রবিবার ইউএনও দুই পক্ষকে ডেকে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, শান্তিরাম মন্ডল একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের কোনো সন্তান নেই। শান্তিরাম প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার (শান্তিরাম) বাবা মৃত্যুর আগে ১০ শতাংশ জমি পুত্রবধূ গুরুদাসী মন্ডলের নামে লিখে দিয়ে যান। এই জমির কিছু অংশে চাষাবাদ করে ও শান্তিরামের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কোনোমতে চলে দুজনের সংসার। এর মাঝে এলাকাবাসীর অনুরোধে গুরুদাসী মন্ডল চার শতাংশ জমি বিলজোনা অষ্টাদশ পল্লী পাগল আশ্রম (মন্দির) এর নামে দান করতে চান। গত ৩০ জুলাই তারিখে পাংশা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে যথারীতি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। পরে গুরুদাসী মন্ডল জানতে পারেন তার ১০ শতাংশ জমিই লিখে নেওয়া হয়েছে।
গুরুদাসী মন্ডল জানান, তার স্বামী প্রতিবন্ধী। তাদের কোনো সন্তান নেই। তিনি লেখাপড়াও জানেন না। তার শ^শুর তাকে ১০ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন। ওই জমিটুকুই তাদের শেষ সম্বল। এলাকাবাসী অনুরোধ করায় চার শতাংশ জমি মন্দিরের জন্য দিতে চান। গত ৩০ জুলাই বুধবার তিনি পাংশা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমি লিখে দিয়ে আসেন। পরদিন দেখেন তার জমিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তখন বুঝতে পারেন, তিনি পড়াশোনা না জানায় তাকে বোকা বানিয়ে ১০ শতাংশ জমি লিখে নিয়েছে।
শান্তি রাম মন্ডল জানান, তিনিও লেখাপড়া জানেন না। জমিজমা সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। সেদিন সকালে মন্দির কমিটির লোকজন তাদের পাংশা নিয়ে যায়। সেখানে তার স্ত্রীর কাছ থেকে টিপসই নিয়েছে। বাড়ি এসে জানতে পারেন তাদের সব জমিই ওরা লিখে নিয়েছে।
দাতার দেবর ধীরেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, আমার বাবা আমার বউদির নামে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির ৪ শতাংশ মন্দিরের পাশে। মন্দির কমিটি কিছু না জানিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। মন্দির পবিত্র স্থান তাই আমি আমার দাদা ও বউদি কে রাজি করায় ওই ৪ শতাংশ মন্দিরের নামে লিখে দিতে। পরে রেজিস্ট্রি অফিসে অন্য একজনের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে জানতে পারি তারা আমার বউদির নামের ১০ শতাংশ জমিই লিখে নিয়েছে।
অষ্টাদশ পল্লী পাগল আশ্রম (মন্দির) কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, আমাদের মিটিংয়ে ওই জমির মালিক গুরুদাসী মন্ডল ১০ শতাংশ জমিই দিতে চেয়েছিলেন। জমি লিখে দিয়ে এসে কেনো এমন অভিযোগ উঠাচ্ছে আমি জানি না। তবে জমি রেজিস্ট্রির সময় দাতা এবং তার স্বামী ছাড়া তাদের পরিবারের কেউ ছিলেন না বলে নিশ্চিত করে করেছেন।
দলিল লেখক অজিত বিশ্বাস জানান, এটা নিয়ে অনেক কিছুই হয়ে গেছে। ইউএনও সাহেব দুপক্ষকে ডেকেছিলেন। দাতার জমি ফেরত দিতে বলেছেন। তিনি যতটুকু জমি দিতে চান ততটুকুই নেওয়া হবে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আবু দারদা জানান, তিনি রবিবার দুই পক্ষকে ডেকেছিলেন। গুরুদাসী মন্ডলের জমি ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যতটুকুু জমি মন্দিরের জন্য দিতে চান ততটুকুই যেন রেজিস্ট্রি করা হয়। যেহেতু গুরুদাসী মন্ডল লেখাপড়া জানেন না এজন্য তিনি একজন সার্ভেয়ার দেবেন। জমির মাপ না বুঝলেও হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন কতটুকু দিতে চান।
আজকালের খবর/ এমকে