বাংলাদেশে অনুপস্থিত অবস্থায় দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিটিশ লেবার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক রায়টিকে প্রহসনমূলক ও গভীরভাবে অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ টিউলিপকে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে জন্য তার খালা ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আদালতের বিচারক রবিউল আলম তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা না দিলে আরও ছয় মাসের সাজা যোগ হবে।
তিনি বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই বিচার প্রক্রিয়াটি ‘ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক’ ছিল। এক বছর ছয় মাস ধরে তারা আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগের সুযোগ পাইনি। আমি পুরো ব্যাপারটিতে হতবাক।
টিউলিপ আর বলেন, আমার কাছে কোনো সমন পাঠানো হয়নি, কোনো অভিযোগপত্র নেই, কোনো যোগাযোগও নেই। আমি তো অধরা কেউ নই, আমি একজন সংসদ সদস্য। তিনি জানান, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন।
টিউলিপ বলেন, আমি যেন কোনো দুঃস্বপ্নে আটকা পড়েছি। আমার দণ্ড হওয়ার বিষয়টি আমি কেবল পত্রিকা পড়ে জানতে পেরেছি। এটি মিডিয়া ট্রায়াল, যা অত্যন্ত অন্যায়।
হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের প্রসিকিউটররা সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্তৃত মামলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার খালার সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে বিতর্কের মধ্যে ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা এখনো চলমান।
আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, টিউলিপ তার বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোর করে তার মা রেহানা সিদ্দিক, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রেদওয়ান সিদ্দিকের জন্য জমির প্লট সংগ্রহ করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রসিকিউটর আগে জানিয়েছিলেন, সিদ্দিকের বাংলাদেশের পাসপোর্ট, আইডি ও ট্যাক্স নম্বর পাওয়ায় তাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবেই বিচার করা হয়েছে।
তবে সিদ্দিকের আইনজীবীরা ফাইনান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি কখনো বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি ও শৈশবের পর থেকে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও রাখেননি।
মামলার শুরু থেকে টিউলিপ অভিযোগ করে আসছেন, প্রসিকিউটররা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ মিডিয়ায় ছড়ালেও তদন্ত কর্মকর্তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা আমাকে জানাননি।
তার পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আমি শুরু থেকেই পরিষ্কার করে বলেছি যে আমি কোনো ভুল করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে, আমি তা মোকাবিলা করব। রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে আমার নাম বিকৃত করা ভিত্তিহীন ও ক্ষতিকর।
সূত্র: বিবিসি
আজকালের খবর/ এমকে