
বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেই সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ (সদর-দেবহাটা) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
দলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা বিএনপির তৃণমূল নেতারা বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আওতাধীন ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির ৩৩ জন সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের যৌথভাবে পাঠানো ওই আবেদনে বলা হয়, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. আব্দুর রউফ অতীতে একাধিকবার দল পরিবর্তন করেছেন। ২০০৯ সালে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে পরে আবার বিএনপিতে ফিরেছেন।
আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করে, সেই বহিষ্কারাদেশ আজও প্রত্যাহার হয়নি।
এছাড়া, গত ২৩ এপ্রিল তার নিজের ইউনিয়নে এক ওয়াজ মাহফিলে জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা কবির বিন সামাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তিনি আলোচনায় আসেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় আলেম–ওলামারা মানববন্ধন করে তার গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
আবেদনে আরো বলা হয়, জেলা বিএনপি তখন স্পষ্টভাবে জানায়, আব্দুর রউফ বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী নন। তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এজন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু।
সদর উপজেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতারা আরও অভিযোগ করেন, সাতক্ষীরা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি খাস জমি দখলের ঘটনায় গত বছর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ তাকে প্রকাশ্যে “বাটপার” বলে মন্তব্য করেছিলেন। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি মনোনয়ন পেলে দলের ভাবমূর্তি ও ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে, উল্লেখ করা হয় আবেদনে।
আবেদনপত্রের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের কাছেও।
এদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তার পরপরই সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষোভে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠে।
জেলা শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। (০৩/১১/২০২৫) সোমবার রাত ১০টার পর খুলনা–সাতক্ষীরা মহাসড়কের বিনেরপোতা বাইপাস মোড়ে আব্দুর রউফের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের কারণে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়াও, গত আগস্টে সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল ও সরকারি খাসজমি দখলের অভিযোগে আলোচনায় আসেন তিনি। তার ভাই জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হবি ওই সময় ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দখলে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পরে প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি খাসজমি ওই দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা ও বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।
আজকালের খবর/বিএস