বৃহস্পতিবার ২৩ অক্টোবর ২০২৫
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নেতানিয়াহু কতটা খুশি?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:২৯ এএম
ডনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে সোমবার গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

কিন্তু ঘণ্টা কয়েক পরেই হিব্রু ভাষায় ইসরায়েলিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি কখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেবেন না এবং গাজার অধিকাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে।

ট্রাম্পের ২০ দফায় এমন প্রস্তাবও আছে, যেগুলোর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের অনেক উদ্দেশ্যই পূরণ হয়ে যাবে। যেমন— ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি, সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে হামাসকে একেবারে দুর্বল করে ফেলা এবং গাজায় একটা অস্থায়ী আন্তর্জাতিক প্রশাসন গঠনের মতো প্রস্তাবও রয়েছে।

কিন্তু যেকোনো ধরনের চুক্তিতে সই করাটা নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত খেসারতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই তার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে।

ফলে নেতানিয়াহু সত্যিকারার্থেই যুদ্ধে ইতি টানবেন কিনা, নাকি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার নতুন বাহানা খুঁজবেন- সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে।

ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল


ট্রাম্পের প্রস্তাব ইসরায়েলের বেশির ভাগ দাবি পূরণের পাশাপাশি নেতানিয়াহুর জন্য নানা সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে।

আগামী বছরের নির্বাচন সামনে রেখে নেতানিয়াহু চাইলে নিজেকে যুদ্ধ বিজয়ী নেতা হিসেবেও জাহির করতে পারবেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পেছনে সরকারের ব্যর্থতা খতিয়ে দেখার সম্ভাব্য অনুসন্ধান থেকেও তার মুক্তি মিলতে পারে।

ইসরায়েলি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, “ট্রাম্পের প্রস্তাব নেতানিয়াহুর জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ হয়ে উঠতে পারে।

“নেতানিয়াহু বলতে পারবেন, ‘আমাকে দেখ, আমি যুদ্ধ করেছি। আমি পুরো গাজা ধ্বংস করেছি। আমি যতটা এগিয়েছি, কেউ তা কল্পনাও করেনি। ইসরায়েল এবং এর নিরাপত্তায় আমি নিজের নিষ্ঠা প্রমাণ করতে পেরেছি। কিন্তু এখন আমাদের মাথা ঠান্ডা রেখে এগোতে হবে’।”

গোল্ডবার্গ বলছেন, এটা বাস্তবতা নয়। তবে এভাবে পরিস্থিতি বর্ণনার সুযোগ রয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাব নেতানিয়াহুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই যুদ্ধ থামানোর যেকোনো পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ।

সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়লেও নেতানিয়াহু নানা কারণে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়ে কোনো চুক্তি করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে তার নামের সঙ্গে।

এসব কারণে ক্ষমতায় থাকতে তাকে নির্ভর করতে হয়েছে ইতামার বেন-গাভির ও বেজালেল স্মতরিচের মতো অতি ডানপন্থি মন্ত্রীদের ওপর, যারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং আরও বিস্তৃত করার শর্তে নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে আসছেন।

সমালোচকরা বলছেন, দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দি হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে এবং হামাসের হামলা ঠেকাতে না পারার ব্যর্ততা থেকে মুক্তি পেতে নেতানিয়াহু যুদ্ধ অব্যাহত রাখার চিন্তা করতে পারেন।

নিউ ইয়র্কে ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কনসাল জেনারেল অ্যালন পিনকাস বলেন, “নেতানিয়াহুর জন্য এসব ঝুঁকি কিন্তু এখনও আছে।

“আপনাকে মনে রাখতে হবে, ট্রাম্প কিন্তু বাইডেনের (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট) মতো নন। ট্রাম্পকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য নেতানিয়াহু কিন্তু এখন রিপাবলিকান পার্টির সব বন্ধুর ওপর নির্ভর করতে পারবেন না।

“সেই সুযোগ আর নেই। ট্রাম্প চাইলে নেতানিয়াহুর জীবন কঠিন করে তুলতে পারেন। আর বিষয়টি নেতানিয়াহুও জানেন।”

অতি ডানপন্থি বিরোধী দল

সংঘাতের প্রায় পুরোটা সময় যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি ও ইসরায়েলি বন্দিদের ফিরিয়ে আনার আলোচনাও ছিল।

সাম্প্রতিক কিছু জরিপও বলছে, ইসরায়েলের অধিকাংশ মানুষ যুদ্ধের ইতি দেখতে চান।

দেশটির বিরোধী দলের প্রধান ইয়ের লাপিদসহ সরকারবিরোধী অনেক এমপি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে পার্লামেন্টে একাধিকবার নেতানিয়াহু সরকারকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

কিন্তু নেতানিয়াহু বারবার তাদের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছেন, যারা যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করতে চান।

ইতামার বেন-গাভির ও স্মতরিচ এরই মধ্যেই ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মতরিচ লেখেন, “এটা একটা কূটনেতিক ব্যর্থতা এবং ৭ অক্টোবরের শিক্ষা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া। আমি মনে করি, এই প্রস্তাবের করুণ ইতি ঘটবে।”

জটিল পরিস্থিত


বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু নিজেকে ইসরায়েলের ‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে তুলে ধরতে পারেন, কিন্তু তিনি পরিস্থিতির ফাঁদে পড়ে গেছেন এবং এখন গদি ধরে রাখার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন।

পিনকাস বলেন, “আমার মনে হয়, নেতানিয়াহু আস্তেধীরে এটাকে (ট্রাম্পের প্রস্তাব) হত্যা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি এটা বলতে পারেন যে, ‘আমরা সতর্কতার সঙ্গে এটা যাচাই করে দেখছি। এখানে আমাদের নিরাপত্তার কিছু বিষয় আছে।’

“একই সঙ্গে দেখা যাবে, তিনি গাজায় যুদ্ধের মাত্রা বাড়াচ্ছেন এবং ইরান নিয়ে আরও তীব্র বক্তব্য দিচ্ছেন। এভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবতা পাল্টে যাবে এবং নেতানিয়াহু ভাববেন, ট্রাম্পের দৃষ্টি অন্যদিকে সরে গেছে।”

আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচনের আগে প্রশাসনের রদবদল নিজেই তদারকি করবেন প্রধান উপদেষ্টা
গাজীপুরে জোরপূর্বক জমি দখলে হামলা: আহত ৩, থানায় মামলা
একলাফে সোনার দাম কমলো ৮৩৮৬ টাকা
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুনরায় সভা করল ঐকমত্য কমিশন
তত্ত্বাবধায়কে ফেরার মামলা এখন সবচেয়ে বড়: প্রধান বিচারপতি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দৃশ্যের পরতে পরতে রেখা চরিত্রে ইরার উন্মাদনা
বদলগাছীতে কুকুরের উপদ্রব, নেই জলাতঙ্কের ভ‍্যাকসিন
বরগুনায় বিনামূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ
অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে: মির্জা ফখরুল
বাদ পড়ে গেলেন ফেরদৌস
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft