রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'জুলাই ৩৬' হলে দেরি করে প্রবেশ করায় ৯১ জন ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তলবের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতার বিরুদ্ধে 'আপত্তিকর মন্তব্য' করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে হলের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রীরা। এর জেরে ওই নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব ধরনের সদস্য পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
সোমবার রাতে হল প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'জুলাই ৩৬ হলের অনাবাসিক ও গণরুমের ছাত্রীদের মধ্যে যারা দেরিতে (রাত ১১টার পর) হলে ফিরেছেন, তাদের ক্রমিক নম্বর ১-৪৫ পর্যন্ত মঙ্গলবার এবং ৪৬-৯১ পর্যন্ত বুধবার বিকেল ৪টায় প্রাধ্যক্ষের অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে।'
যদিও পরে সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার দুপুরে নোটিশটি প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে, সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি তাদের ফেইসবুক পেইজে এ খবর দিয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নামের একটি ফেইসবুক গ্রুপে ফটোকার্ডটি শেয়ার দেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি জান্নাতুন নাঈম তুহিনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান মিলন ওই ফটোকার্ডের নিচে মন্তব্য করেন, 'এগুলো ছাত্রী নয়, এগুলো বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী।' মিলন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও মিলনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর তিনি তার ফেইসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন ছাত্রী বলেন, '২০২৫ সালেও নারী নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সাইবার বুলিংয়ের কারণে নারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন। রহমাতুন্নেছা হলে যেমন হয়েছিল, আজ জুলাই ৩৬ হলের ৯১ জন ছাত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা হল। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'
আরেকজন ছাত্রী বলেন, 'শুধু মিলন নয়, অনেক ছেলে ও মেয়ে আছেন, যারা নারী হয়েও আরেক নারীকে নিয়ে সাইবার বুলিং করেন। যারা সাইবার বুলিং করেন তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।'
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সদস্যরা হলেন—সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক।
রাবি ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, 'প্রথমে তার সদস্য পদ স্থগিত করা হলেও, তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আজ সকালে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি ও আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, 'আমাদের নজরে ওই কমেন্টসহ অন্যান্য কমেন্টও এসেছে। আমরা আগামীকালই ওই ছাত্রনেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবো। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের এডমিনদের সঙ্গেও কথা বলবো। সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।'
ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, 'এ ধরনের মন্তব্য যারা করে, তারা কতটা অসুস্থ মানসিকতার মানুষ—তা খুব সহজেই বোঝা যায়। এই ধরনের মানুষের কাছে কেউই নিরাপদ নয়। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানলাম। সত্যতা পেলেই ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে বিষয়টি তোলা হবে।'
আজকালের খবর/ এমকে