থাইরয়েড হলো আমাদের গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটি প্রজাপতি-আকৃতির অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। এটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোনের মাত্রার তারতম্য হলেই বিগড়ে যায় শরীর। হরমোন বেশি নিঃসরণ হলে এক রকম সমস্যা হয়, মাত্রা কমে গেলে হয় আর এক রকম। থাইরয়েডের মাত্রা বিগড়ে গেলে কেউ যেমন স্থূলত্বের সমস্যায় ভোগেন, তেমনই কারও ওজন কমে যেতেও পারে। দেখা দিতে পারে ক্লান্তি। তৈরি হতে পারে আরও নানা সমস্যা।
সময় থাকতে থাইরয়েডের চিকিৎসা না করালে শারীরিক সমস্যাসহ ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। থাইরয়েডের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, তবে খাবার-দাবার বিষয়ে সামান্য খেয়াল রাখলেই এই সমস্যার মোকাবিলা করা যেতে পারে। সঠিক খাবার-দাবার যেমন থাইরয়েডের অসুখ বশে রাখতে পারে, তেমনই ভুল খাদ্যাভ্যাস ক্ষতিও করতে পারে।
থাইরয়েড কী? থাইরয়েড গ্রন্থিটি আমাদের শ্বাসনালির সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে দু-ধরনের হরমোন টি থ্রি ও টি ফোর নিঃসরিত হয়। আমাদের শরীরের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোন থাকে।
তাই থাইরয়েডের সমস্যা প্রধানত দু-ধরনের হয়। হাইপারথাইরয়েডিজমে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর অন্যটি হলো হাইপোথাইরয়েডিজমে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায়।
শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা শুরু হলে দেখা দেয় নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা হলো- ক্লান্তিবোধ, ওজন বেড়ে যাওয়া, গরম আবহাওয়ায়ও শীত অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন খাবারগুলো থাইরয়েডের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
সয়াবিন বা সয়াবিনজাতীয় সব খাবারসয়াবিন থেকে যেসব খাবার সেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো থাইরয়ডের সমস্যা বাড়িয়েও দিতে পারে। বিশেষ করে তা যদি দু’দিন অন্তর খাওয়া হয়। প্রোটিনে ভরপুর সয়াবিন উপকারী হলেও, এটি থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণকে প্রভাবিত করতে পারে, এমনকি থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধের শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
২০১৫ সালে ‘জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজি এবং মেটাবলিজম’-এর এক গবেষণাপত্রে প্রকাশ করা হয়, সয়াবিন থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং আয়োডিনের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। সেই কারণে থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সয়া দুধ, কম পরিমাণে সয়াবিন খেতে হবে।
গ্লুটেনথাইরয়েডের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে গ্লুটেন। ‘নিউট্রিয়েন্টস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, গ্লুটেন অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তার ফলে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণেও হেরফের হতে পারে। ময়দার খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
প্রক্রিয়াজাত খাবারপ্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে। বিশেষত হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকলে এই ধরনের খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। থাইরয়েডের রোগীদের অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার প্রবণতা কার্ডিয়োভাস্কুলার অসুখের কারণ হতে পারে।
ফ্যাটযুক্ত খাবারউচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েটও থাইরয়েড রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। তবে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে যাদের ওজন হু হু করে বাড়ছে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার। ফ্যাট যুক্ত এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার হরমোনের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কৃত্রিম শর্করামিষ্টি, চিনি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিকদের জন্য যেমন ক্ষতিকর, থাইরয়েডের রোগীদের জন্যও তাই। ‘এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম ক্লিনিকস অফ নর্থ আমেরিকার ২০১৮ সালের গবেষণাপত্রে প্রকাশ করা হয়, চিনি খাওয়ার প্রবণতা বিপাকহারে প্রভাব ফেলতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যায় বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। কারণ, হরমোনের মাত্রার তারতম্যে এমনিতেই এমন রোগীদের বিপাকহারে সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া কিছু কিছু ফল, যেমন স্ট্রবেরি, বাদামের মধ্যে চিনাবাদাম, মিলেট জাতীয় খাবার থাইরয়েডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আজকালের খবর/ এমকে