
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। আজ শনিবার এ সময় তিনি মন্তব্য করেন, গত ৫২ বছরেও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। এতে তিনি সরকারের প্রতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এবং উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানান।
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, বিগত পাঁচ দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত কোনো উন্নতি হয়নি। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ক্ষেত্রে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। যদিও আমরা উন্নয়নশীল দেশ হলেও, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো এবং মান বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া এমন দেশগুলি একসময় বাংলাদেশের মতোই ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই দেশগুলো অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছেছে, আর এর পেছনে রয়েছে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার একটি বড় অবদান। এসব দেশগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের হওয়ায় তারা অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার বক্তব্যে একটি আধুনিক শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে পারছে না। এর কারণ হলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও পুরানো কাঠামোতে চলছে। তাই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, মানোন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের জন্য একটি আধুনিক শিক্ষা কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আলোচনা করেন তিনি, যা তথ্য প্রযুক্তি, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া নিয়ে এসেছে। উপাচার্য বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। সিলেবাসে এমন পরিবর্তন আনতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি এবং শিল্প খাতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে সাহায্য করবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সিলেবাস সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানান প্রফেসর আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, বর্তমানে সিলেবাসের মধ্যে এমন পরিবর্তন আনার কাজ শুরু হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়।
শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি সমন্বিত, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।
উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার মধ্যে সেতু তৈরি করতে হবে। কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে সাজাতে হবে, কারণ এ ধরনের শিক্ষা দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এতে করে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি নতুন দিক এবং দৃষ্টিভঙ্গি পেতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি উন্নত ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করবে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন।
আজকালের খবর/ওআর