যে আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, এক বছরে পরে এসে তার হিসাবনিকাশ মিলিয়ে দেখার কথা তুলে ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘সমীকরণ’ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
তিনি এও বলেছেন, ‘পরিবর্তনের’ মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হবে, তা না হলে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় যুব সম্মেলনে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে ফলে অনেক হিসাবনিকাশ আমরা করছি যে আমরা কি পেলাম, তরুণরা কি পেল। দেশ কতটুকু পরিবর্তন হল। হিসাবনিকাশ না করে নিলে বুঝবো না আমরা, আমাদের আগামী দায়িত্বটা কি।”
গত বছরের জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার ধারাবাহিকতায় ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
সে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
সরকার হটানোর সেই আন্দোলেনের লক্ষ্যের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় নাই। যে নতুন বন্দোবস্তের জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম, জীবন দিয়েছিলাম, জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, সেই নতুন বন্দোবস্ত, নতুন বাংলাদেশ আমরা পাই নাই।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থান শেষ হয়নি মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, “আমাদের এ লড়াই, তরুণদের এ লড়াই, এ দায়িত্ব সমাপ্ত হয় নাই। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে, প্রজন্মকে প্রতারিত করতে সকল ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
“কিন্তু আমরা বলতে চাই সমীকরণ এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। ফলে, যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছে, তারা ভুল পথে হাঁটছে।”
গণঅভ্যূত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে তথ্য উপদেষ্টার পদে ছিলেন নাহিদ ইসলাম। ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্বে আসার আগে তিনি সরকারের পদ ছেড়ে দেন।
এনসিপি শুরু থেকেই নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। সংস্কার উদ্যোগে মৌলিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তারা গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাবসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে।
৩১ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ইতি টেনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে দলগুলোর সহমতের কথা জানানো হয়েছে। তবে এর মধ্যে ১০টিতে ভিন্ন মত বা নোট অব ডিসেন্ট আসার কথাও বলেছে কমিশন।
সংলাপে জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দাবি করে আসছে এনসিপি। আর গেল ৫ অগাস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণার পর তাকে ‘অসম্পূর্ণ’ বললেও মেনে নিয়েছে দলটি।
এসব বিষয় তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “গত এক বছর ছাড় দিয়েছি, জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে কোনো ছাড় হবে না। এক শতাংশ ছাড়ও দেওয়া হবে না।”
গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি এখনো মাঠে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্যই আমাদের লড়াই ছিল। কিন্তু আমরা এও বলেছি, পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে যেতে হবে।
“বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে না পারে, দেশে আরেকটি ১/১১ আসবে।”
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিতে এই সরকার শহীদদের রক্তের উপর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত, এই সরকার যেতে পারবে না। কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।”
রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে জাতীয় যুব সম্মেলনে যুবশক্তির পক্ষ থেকে যুবকদের জন্য ইশতেহার ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মূখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব জাহেদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
আজকালের খবর/ এমকে