
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী ও কর্মমুখী করার ওপর জোর দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা চাকরির বাজারে টিকে থাকার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা সংস্কার এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন শীর্ষক সংলাপে তিনি এই মন্তব্য করেন। গত রবিবার অনুষ্ঠানটি রাজধানীর গুলশান ২-এর লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে অনুষ্ঠিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান এবং প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করছে, কিন্তু তাদের চাকরিক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অপর্যাপ্ত।
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, পাশাপাশি কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে তোলার উদ্যোগ চলছে।
তবে তিনি অভিযোগ করেন, অধিভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার ঘাটতি, শিক্ষক প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদের অতি হস্তক্ষেপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছে।
উপাচার্য আরও বলেন, উচ্চশিক্ষা যদি দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা এবং প্রযুক্তির গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারে, তবে উন্নয়ন হবে অসম্পূর্ণ এবং অস্থায়ী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সুশাসন ও পরিকল্পিত সংস্কারের ওপর।
সংলাপে আরও অংশ নেন-সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মঞ্জুর, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে'র উপাচার্য ড. এম তামিম, মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের সদস্য জিমি আমির, চেয়ার ওয়ার্কার রিফর্ম কমিশন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ।
ওই সময় সংলাপে বক্তারা আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা মানবাধিকার ও টেলিফোনে আড়িপাতা বন্ধের আহ্বান জানান। এছাড়াও পুলিশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংস্কার, ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, জ্বালানি নিরাপত্তা, সংবিধান সংস্কার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সংগঠনের কার্যক্রম সহজীকরণ সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়নের জন্য মত প্রকাশ করেন।
আজকালের খবর/ এমকে