
আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কিনে দিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের এই গাড়িগুলো কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য ১৯১টি পাজেরোসহ মোট ২২০টি গাড়ি কেনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৪৪৫ কোটি টাকা।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি কিনবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে, গাড়ি কেনার এই সিদ্ধান্তে চলতি বছর সরকারের জারি করা পরিপত্র উপেক্ষিত হয়েছে। গত ৮ জুলাই জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছিল, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তা ব্যবহৃত গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরনো হলে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নতুন গাড়ি কেনা যেতে পারে। তবে পরিবহন পুলের তথ্য বলছে, মন্ত্রীদের জন্য কেনা গাড়ি ৯ বছরের পুরনো, ফলে এখানে শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।
এরই মধ্যে মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে গেছে। অনেকেই বলছেন, পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা যে ৬০ সদস্যেরই হবে, এটা কীভাবে নির্ধারণ করল অন্তর্বর্তী সরকার।
পাশাপাশি এসব গাড়ি এখন কেন কেনা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, কী গাড়ি কিনবেন; তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার কেন নিচ্ছে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়।
তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের পরিপত্র উপেক্ষা করা তো বটেই, একই সঙ্গে প্রশ্ন আসবে, পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার দায়িত্বটা অন্তর্বর্তী সরকারকে কে দিয়েছে? অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে, অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, গত ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের জিপ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম পড়ছে ৫২ লাখ টাকা। এ ধরনের ২২০টি গাড়ি কিনতে সরকারকে খরচ করতে হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের অনুকূলে মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে, এই ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাড়তি ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা যোগানের জন্য অন্য খাতের অর্থ ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
আজকালের খবর/বিএস