প্রধান নির্বাচন কমিশনার
চিঠির অপেক্ষায় সিইসি, ভোটের দু’মাস আগে তফসিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫, ৭:২৯ পিএম
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। এছাড়া ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

আজ বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন নিয়ে ইসির প্রস্তুতি তুলে ধরে নাসির উদ্দিন বলেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গতকালকে তো একটা ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রমজানের আগে ইলেকশন করার জন্য আমাদেরকে একটা চিঠি দেবেন, আমি প্রত্যাশা করছি, দ্রুত চিঠিটা পেয়ে যাব। কারণ উনার কথার মধ্যে আমরা তো বুঝতে পারি যে, খুব দ্রুতই চিঠিটা আমরা আমাদের কাছে পাঠিয়ে  দেবেন।” 

তবে চিঠি এখনই না এলেও ঘোষিত সময়সীমা ধরে ইসির প্রস্তুতি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিইসি বলেন, “চিঠি না পেলেও আমাদের তো বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনায় ছিল ইলেকশনের তারিখ নিয়ে। আমাদের প্রস্তুতি আমরা অনেক আগে থেকে নিচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি ইনশাআল্লাহ। আমাদের কোনো প্রস্তুতিতে ঘাটতি হবে না।” 

রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের ঘোষণা এলেও কবে তফসিল হবে সে বিষয়ে ডিসেম্বরের শেষার্ধের প্রতি ইঙ্গিত দেন সিইসি। তিনি বলেন, ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেদিন পোলিং ডেট হবে, তার দুই মাস আগে তফসিল হবে। আগে চিঠিটা পেয়ে নিই। বললাম তো যেদিন আমরা পোলিং ডেট ঠিক করবো। 

তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন সভায় আলোচনা করে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় ও ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নাসির উদ্দিন বলেন, “আগে চিঠিটা (প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ভোট নিয়ে) পাই। আমরা আলোচনা করে, আমরা চিন্তা করব যে অমুক দিন ভোট হবে তার থেকে মাস দুই আগে আমরা শিডিউলটা ঘোষণা করব।” 

একটি ভালো নির্বাচন করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি ইসির নেওয়া দরকার, সেটা চলছে বলেও জানিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, “প্রধান কাজগুলোর মধ্যে নিখুঁত ভোটার তালিকা হালনাগাদ খসড়া প্রকাশ এবং৩১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। ভোটারযোগ্য তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে তফসিলের মাসখানেক আগে একটা সময় নির্ধারণ করে সম্পূরক তালিকা করা হবে।” 

যে কোনো পরিস্থিতি নিজে ভালো থাকার প্রচেষ্টার কথাও এ সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নাসির উদ্দিন। “আমি সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ। যখন যে অবস্থায় থাকি আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমার পৈতৃক শিক্ষা। এটা যে অবস্থায় থাকি না, যত কঠিন সময় যাক না কেন, আমি ভালো আছি, সেটাই বলবো আল্লাহর রহমতে।” 

গত জুন মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠকের পর এক ‘যৌথ ঘোষণায়’ বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ হলে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে। 

দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের জন্য এক মাস সময় 

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনা শেষ হলে নির্বাচন কমিশনও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে। এজন্য প্রায় একটা মাস সময় পরিকল্পনা করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন সিইসি। 

রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাসির উদ্দিন বলেন, “এখন ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যারা সারাদিন ধরে দলের আলোচনা করছেন তাদের পাওয়া মুশকিল। যেহেতু অনেক রিফর্মস কমিশন হয়েছে বিশেষ করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন হয়েছে তারা অনেক স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ করেছে। এক ধরনের ইসির কাজ তারা সেরে রেখেছে। তারপরও আমাদের তরফ থেকে আমরা একটা অপেক্ষায় ছিলাম, দলগুলো একটু ফ্রি হোক। ফ্রি হলে তখন আলোচনাটা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে করবো। আলোচনা করার জন্য এক মাসের একটা প্ল্যান করেছি।

আয়নার মতো স্বচ্ছ ভোটের আশা 

সচেনতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন সিইসি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, একটা ইলেকশন ইলেকশনের স্বচ্ছতার জন্য যা যা দরকার, তার মধ্যে রুল অব মিডিয়া ইজ নাম্বার ওয়ান। আমরা কিন্তু ইলেকশনটাকে স্বচ্ছ করতে চাই; আয়নার মতো পরিষ্কার করতে চাই। মানুষ, বিশ্ববাসী দেখুক যে আমাদের আন্তরিকতার আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি আছে কিনা। এটা দেখুক আমরা সেটা চাই। লুকিয়ে কোনো কাজ করতে চাই না। 

নির্বাচন কশিমনের ভূমিকাকে ‘পরিষ্কার’ দাবি করে ভোট আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি। তিনি কলেন, আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা দেশবাসীর কাছে দেখাইতে চাই যে, আমরা কী কী কাজ করছি এবং সুন্দর ইলেকশনের জন্য আমরা কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছি। কীভাবে কন্ডাক্ট করছি আপনারা দেখতে পারবেন। আপনাদের মাধ্যমেই এই জাতি এটা দেশবাসীটা জানতে পারবে।

সেপ্টেম্বরকে ঘিরে নিবন্ধন, কেনাকাটা শেষ করতে চায়
 
নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, প্রস্তুতি নিয়ে বললে ভোটার লিস্টটা হয়ে যাচ্ছে। প্রকিউরমেন্ট টার্গেট ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ করে ফেলতে পারব। সীমানা নির্ধারণ স্বচ্ছভাবে হয়েছে। শুনানি করে শেষ করা হবে। একটা বড় কাজ হয়ে গেছে পার্টি রেজিস্ট্রেশন। ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই চলছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে, তাদের বিষয়ে তদন্ত হবে, এরপর কারো আপত্তি আছে কিনা, ১৫ দিনের বিজ্ঞপ্তি হবে। এসব বড় কাজ বাই সেপ্টেম্বর; ইনশাআল্লাহ উই ওয়ান্ট টু কমপ্লিট অল দিস বিগ টাস্ক। 

পাশাপাাশি ভোটের কাজে সম্পৃক্ত ৮-৯ লাখ লোকবলের প্রশিক্ষণের কাজও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার পোস্টাল ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ও রয়েছে। আমরা এবার প্রায় ১০ লাখ লোকবলকে পোস্টাল ব্যালটের আওতায় নিয়ে আসর চেষ্টা করবো। সাংবাদিকদের বিষয়টি জানা ছিল না; এটাও নোট রাখলাম।

লালকার্ড আর কত 

লেভের প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সহযোগিতা চান সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, সুতরাং যেন তেন একটা নির্বাচন করে আপনারা জিতার চেষ্টা করবেন না। আল্লাহর দোহাই, আমাকে সাহায্য করুন। আমি একটা সুন্দর ক্রেডিবল একটা ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন দিতে চাই; আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া পারব না। 

দলগুলোকে খেলার মাঠের পরিবেশ রক্ষায় সহযোগিতা চান তিনি। তিনি বলেন, প্লেয়াররা যদি সবাই ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে যে আমরা ফাউলই করব; এখন রেফারির পক্ষে সে ম্যাচ পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। লালকার্ড কজনকে দেখাবেন আপনি? সুতরাং যারা খেলবেন, তাদের তো দায়িত্ব আছে বিশাল। আমি এই মেসেজটা রাজনীতির দলগুলোকে দিতে চাই। 

দলগুলোকে অন্যতম অংশীদার বর্ণনা করে সিইসি বলেন, তারা একটা মেজর স্টেকহোল্ডার। আমাদের দায়িত্ব হবে খেলার মাঠটা তাদের জন্য সমান করে দেওয়া। তারা সুন্দর একই সুযোগ পায় সেই চেষ্টাটা আমরা করছি এবং করব। কর্মকর্তাদেরও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। আমি যে লেভেল প্লেং ফিল্ড তৈয়ার করার কথা বলছি। এটার বাস্তবায়ন আপনাদের ওপর নির্ভর করছে আমি যে আপনারা যদি এই কাজে যদি আমাকে সহযোগিতা না করেন আমি তো এটা কাজটা করতে পারবো না। 

ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, আমাদের মূল মেসেজটা হচ্ছে- আমরা এবার এই ইলেকশনটাকে পার্টিসিপেটরি করতে চাই। ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ আমরা চাই।

অন্যতম চ্যালেঞ্জ যত 

ভোটারদের আস্থা অর্জনকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সিইসি। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নাম্বার ওয়ান চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। আসলে ভোটারদেরকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা হারিয়েছে; নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়েছে। 

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটা সম্ভব প্রস্তুতি ইসির তরফ থেকে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিইসি বলেন, চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটা বললাম মানুষকে আস্থায় নিয়ে আসা। ভোটারদের আস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি ভোটারদেরকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা। প্রধান উপদেষ্টা যে বলেছেন উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের দিনের মতো একটা ইলেকশন দেখতে চান আমরা সেইটা সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি।

ভোটে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে ইসি কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিইসি। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের কর্মকাণ্ড যতই তারা আরো দেখবে ভবিষ্যতে দেখবেন আমাদের উপর আস্থা সৃষ্টি হবে। কারণ আমরা যখন প্রফেশনালি নিউট্রালি কাজ করছি, তখন এমনিতেই আস্থা ফিরে আসবে। আমরা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথা বলতে পারেন, উনাদের ইচ্ছা বললে কোন অসুবিধা নাই।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
বেরোবির সাবেক ভিসি কলিমউল্লাহ গ্রেপ্তার
জুলাই শহীদের তালিকা থেকে ৮ জনের নাম বাতিল, গেজেট প্রকাশ
আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে ফ্রান্স
সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা, কঠোর নিরাপত্তা
জামায়াত আমিরের স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
একসঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৭৬ কর্মকর্তাকে বদলি
শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে আলোচিত সিনেমা ‘জলরঙ’
দেবীদ্বারে তিন দফায় বিএনপির বিজয় মিছিল
ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত আর্থিক খাত সংস্কার করে যাব: অর্থ উপদেষ্টা
সাজিদ হত্যার ঘটনার তদন্তে মাঠে ‘সিআইডি’
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft