প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৫ AM আপডেট: ০৪.০৩.২০২১ ১২:৫৮ AM
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড ২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসানে আছে। এর মধ্যে লোকসানের বোঝা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে মাবিয়া গ্রুপ।
মাবিয়া গ্রুপের তিনটি জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠানের কাছে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের মোট খেলাপি পাওনা ৪৭ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার টাকা। আর এ পাওনা আদায়ে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হতে হয় প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের।
এদিকে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা ফেঁসে যাচ্ছেন। অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ও পদে থেকে জনবল নিয়োগ এবং প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তুহিন রেজার বিরুদ্ধে ২০২০ সাল থেকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিলো।
দুদক সূত্র জানায়, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডির বিরুদ্ধে জীবন বীমা করপোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণ ৬০ কোটি টাকা মেয়াদি আমানতের সুদসহ তহবিল ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভিস রুল ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে চাকরি নেওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এবং এমডি হওয়ার পর নিজ ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ গড়ারও অভিযোগ ওঠে।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এএমডি পদে ছিলেন তুহিন রেজা। ওই সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু জনবল নিয়োগ দেন। জনবল নিয়োগের জন্য তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে থেকে নানাভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমান অর্থও আত্মসাত করেন। এসব অভিযোগ ওঠার পর ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান স্বাক্ষরিত চিঠিতে তুহিন রেজাকে ৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। কিন্তু তিনি ওই সময় দুদকে হাজির হননি। পরে তিনি ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির হন। ওইদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ২৮ অক্টোবর ইস্যু করা চিঠিতে বলা ছিলো, তুহিন রেজার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভিস রুল ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে চাকরি গ্রহণ, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা সে সময় দাবি করেছিলেন ২০১৬ সালে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এএমডি পদের পাশাপাশি তিনি কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় কাজের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয়েছিল। যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ছিলেন। অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সেসব কর্মীর নিয়োগ নিয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন পক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দিয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযোগের নিস্পত্তিও হয়ে যায়। তারপরও হঠাৎ করে এখন দুদক থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আজকালের খবরকে বলেন, ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে তাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। অনেক প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তার বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, ফার্স্ট ফাইন্যান্স পুঁজিবাজারের ২০০৩ সালে তালিকাভুক্ত হয়। নানা অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে পড়ে কোম্পানি লোকসানে পড়ে। তুহিন রেজা এমডির দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠান আরো তলানিতে নেমে যায়। এনএমএস।