
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ও গৌরবময় দিন যা গভীর শ্রদ্ধা, আবেগ ও প্রেরণা। জুলাই ’২৪-এ সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান স্মরণে আয়োজিত কর্মসূচিতে উদ্ভাসিত হয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগ, গণতান্ত্রিক চেতনা এবং এক নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়।
দিবসটির সূচনা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচির মাধ্যমে, যা প্রতীকীভাবে প্রজন্মের প্রতি শহিদদের রক্তের আহ্বানকে ধারণ করে। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত র্যালি প্রতিরোধ ও বিজয়ের দৃপ্ত প্রতীক হয়ে ওঠে।
এরপর নতুন কৃষি অনুষদের নিচে স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে ফুটে ওঠে জুলাই ’২৪-এর প্রতিটি সাহসী মুহূর্ত-যা স্মরণ করিয়ে দেয় ছাত্র-জনতার এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধের গল্প।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা। সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন ছাত্র-কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ রায়হান। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন গাকৃবির ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সফিউল ইসলাম আফ্রাদ।
আলোচনার শুরুতেই শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। রেজিস্ট্রার মোঃ আবদুল্লাহ্ মৃধার স্বাগত বক্তব্যের পর প্রদর্শিত হয় গাকৃবি কর্তৃক নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র, যা তুলে ধরে জুলাই’২৪-এর গণজাগরণ ও ত্যাগের ইতিহাস।
ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য প্রদান করেন হাফসা শারমীন, সাজ্জাতুল ইসলাম শাওন, দুলাল হোসেন, আবু হানিফ পালোয়ান, প্রফেসর ড. মোঃ আবু আশরাফ খান, প্রফেসর ড. মোঃ মসিউল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোঃ গোলাম রসুল ও প্রফেসর ড. নাসরীন আক্তার আইভী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. তানজীমউদ্দিন খান বলেন, “জুলাই ’২৪ কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়; এটি ছিল এক মূল্যবোধভিত্তিক গণঅভ্যুত্থান-যা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, জুলাই ৩৬ কেবল একটি স্থান নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস। যারা এই আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগ যেন কখনও বিস্মৃত না হয়—সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখ চত্বরকে ‘জুলাই ৩৬ চত্বর’ ঘোষণা করে চেতনার উত্তরাধিকার রক্ষায় একটি সাহসী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, যেখানে নাটক, সংগীত ও আবৃত্তির মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে ওঠে সেই আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্ত।
পুরো আয়োজনটি ছিল গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি-তাদের প্রতি, যারা নিজেদের ভবিষ্যৎ উৎসর্গ করে গড়েছেন একটি স্বাধীন, ন্যায়ের বাংলাদেশ।
আজকালের খবর/বিএস