সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের ঘোষণা হলে তা জনগণের সাথে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
মঙ্গলবার ঢাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বাষির্কীর এক আয়োজনে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছর আওয়ামী-বাকশালীরা দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তারা আবার দৃশ্যপটে ফিরে আসার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।”
গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরে এসে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের মধ্যে দমন-পীড়নের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী-এমপিদের বিচারের এবং দ্রুত নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বির্তক চলছে।
জামায়াতে ইসলামী সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে। অপরদিকে বিএনপি চায় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দাবি সংস্কার শেষ করে গণপরিষদ নির্বাচন।
এ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
সে ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না। যারা নতুন করে স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরকেও জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”
তাহের বলেন, “গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সকল নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
“বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত, এসব ছিল ভূয়া ও নির্বাচনের নামে প্রহসন।”
অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।
তাহেরের মতে, এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনি অপরাধ ‘থাকবে না’, ভোট চুরি ও কেন্দ্র দখল ‘হবে না’। ‘থাকবে না’ টাকার খেলা।
তিনি বলেন, “যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তারাই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। তারা মাস্তানি ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাদের সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি তারা মেনে নেবে না।”
সংস্কার করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাহের বলেন, “জনগণের রক্তের ওপর দিয়েই জুলাই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আপনি এখন ক্ষমতায়। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তাই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
“সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। আর দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উদযাপনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা গণমিছিল করে। মিছিল শুরুর আগে মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন দলটির নায়েবে আমির তাহের।
সেখানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ রেজাউল করিম, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
পরে জামায়াতের গণমিছিলটি মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।
এছাড়া দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ‘জুলাই জাগরণ নব উদ্যমে বিনির্মাণ’ শীর্ষক শোভাযাত্রা করেছে।
সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়। শাহবাগে গিয়ে সমাবেশ করে শোভাযাত্রা শেষ করে সংগঠন।
আজকালের খবর/ এমকে