
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন এরই মধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে। এক সময়ের বিএনপির ‘দূর্গ’ হিসেবে পরিচিত জেলার তিনটি সংসদীয় আসনেই এবার দলটিকে লড়তে হচ্ছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সঙ্গে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পাশাপাশি বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিবন্ধন ফিরে পাওয়া জামায়াতে ইসলামী। মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)।
নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার সব আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। পাড়া-মহল্লা থেকে চায়ের দোকান, সর্বত্রই চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দলীয় নিবন্ধন ও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরে পাওয়ায় জামায়াতে ইসলামী এবার এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলার তিনটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমেছে তারা, যা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে, বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্য। তিনটি আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে। এতে দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আসিফ মোস্তফা জামাল (নেহাল) জানান, তারা গুছিয়ে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘জনবান্ধব ও ভিন্নধারার নেতৃত্ব বেছে নেবো, যারা স্থানীয় উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা কিছুটা সময় নিচ্ছি, তবে শিগগিরই জেলার তিনটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।’
তিন আসনের ভোটের হিসাব
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন দলের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা। তৃণমূলের নেতাদের মতে, তিনি দলের দুঃসময়ে কর্মীদের পাশে ছিলেন এবং নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. কেরামত আলী। দু’জনেরই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকায় এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা বেশ দীর্ঘ। আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সালাম তুহিন ও সাবেক মেয়র তারিক আহম্মেদের পাশাপাশি শক্ত অবস্থানে আছেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক (শুচি)। স্থানীয় কর্মীদের একটি বড় অংশ শুচিকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে আগ্রহী। তাদের ভাষ্য, গত নির্বাচনেও তিনি মাঠে সক্রিয় থেকে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ড. মিজানুর রহমান ইতোমধ্যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল সবচেয়ে তীব্র। হারুনুর রশীদ, গোলাম জাকারিয়া ও রফিকুল ইসলাম (চাইনিজ)- এই তিন ধারায় বিভক্ত স্থানীয় বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে হারুনুর রশীদের প্রভাবকে কেন্দ্র করে বিভাজন স্পষ্ট হওয়ায় সাংগঠনিক দুর্বলতা দৃশ্যমান। এ আসনে হারুনের পাশাপাশি আরেক মনোননপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রদল নেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ কেন্দ্রে জোর লবিং চালাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন জামায়াতের একক প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। জামায়াত নেতাদের দাবি, তৃণমূলে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
আজকালের খবর/ওআর