ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ‘জাগ্রতবাংলা’, ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় কেতন’ ও ‘স্বাধীনতা চিরন্তনের’ মতো অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যের স্রষ্টা তিনি।
রবিবার (২০ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। হামিদুজ্জামান খানের স্ত্রী চিত্রশিল্পী আইভি জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হামিদুজ্জামান খানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম চঞ্চল। পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন হামিদুজ্জামান খান। নিউমোনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান চিকিৎসকরা। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে আইসিইউ, পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। রবিবার সকালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুজ্জামান খান। ১৯৭০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফর্ম, বিষয়ভিত্তিক ও নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ১৯৭৬ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় তিনি নির্মাণ করেন ‘একাত্তর স্মরণে’ ভাস্কর্য। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজধানী সিউলে অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে ‘স্টেপস’ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এরপর আন্তর্জাতিক পরিসরে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ক্যানভাসে হামিদুজ্জামান খান জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিমূর্ত ধারায় ফুটিয়ে তুলেন নিসর্গ ও মানবশরীর।
সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ‘হামলা’, বঙ্গভবনে ‘পাখি পরিবার’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘শান্তির পায়রা’ তার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ‘হামিদুজ্জামান খান ১৯৬৪-২০১৭’ শিরোনামে তার রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন হামিদুজ্জামান খান। ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ফেলোশিপ দেয়। দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ গাজীপুরের কড্ডায় তার ভাস্কর্য সংগ্রহ দিয়ে বড় এক ভাস্কর্য বাগান নির্মাণ করেছে।
১৯৭৬ সালে আইভি জামানকে বিয়ে করেন হামিদুজ্জামান খান। আইভি জামান চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। পেশাগতভাবে তিনিও একজন শিল্পী ও ভাস্কর। এ দম্পতির জুবায়ের জামান খান, জারিফ হামিদুজ্জামান নামে দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। জুবায়ের জামান খান একজন আলোকচিত্রী।