প্রকাশ: শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫, ৭:১৯ পিএম

পেকুয়া উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষের সরকারী চিকিৎসা সেবার একমাত্র অবলম্বন পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির মান্যবর সদস্য মৃত্যুঞ্জয়ী সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৮ সালে সৌদি সরকারের আর্থিক সহযোগীতায় এ হাসপাতাল নির্মাণ করে। তখন থেকে একটি প্রকল্পে পরিচালনা করছিলেন, পরে এটি ২০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে ৩১ শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে।
জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও বহির্বিভাগ ও আবাসিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৩১ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসকের সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল বিধি অনুযায়ী এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১০টি। হাসপাতালের প্রধান কর্তা ছাড়া চিকিৎসক ৯ জন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭ জন চিকিৎসক থাকলেও সেখানে আছেন ৫ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৪জন কনসালটেন্ট পদে রয়েছেন ২ জন, মেডিকেল অফিসার ৩ জন স্পেশালিষ্ট ৪ জনের ২ জন রয়েছে। নির্ধারিত সার্জারি কলসালটেন্ট ও মেডিসিন কনসালটেন্ট পদে কেউ নাই। নার্স কর্মকর্তার ২৫ পদে ২০জন উপস্থিত থাকলেও রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ডাক্তার নার্স কর্মকর্তা না থাকায় বাড়তি রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা প্রেসনে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের মান সম্মত চিকিৎসা দিতে পারছেনা। সার্জন কনসালটেন্ট স্পেশালিস্ট প্রধান হিসাব রক্ষক ফার্মাসিস্ট, সিনিয়র নার্সের পদ সহ গুরুত্বপূর্ণ পদবীতে লোকবল না থাকায় বর্তমানে চিকিৎসা সেবার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। গত মাসের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর হিসাব বিবরনীতে দেখা গেছে- বহির্বিভাগে ২২৫৪২জন, জরুরী বিভাগে ৫৩২৮জন, আবাসিক তথা ওয়ার্ড়ে ১৪০১ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
স্পেশালিষ্ট দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বৈকালিক সেবা দিয়ে আসা কার্যক্রম চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। অপারেশন টিয়েটর, প্যাথলজি সেবা, ব্লাড ব্যাংক চালু রয়েছে। এক্সেরা সেবা চালু থাকলেও কোনো প্রকার ইনষ্ট্রুমেন্ট সরবরাহ করা হয়না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩১ শয্যাশায়ী তথা আবাসিক চিকিৎসার ব্যবস্থার বিপরীতে ১শ’ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি দু’জন চিকিৎসক প্রেসনে চমেক হাসপাতালে প্রশিক্ষণের জন্যে চলে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছেন। জরুরী ভিত্তিতে শূণ্য পদ পূরণ করা না হলে চিকিৎসা সেবা আরো অবনতি হয়ে যাবে হাসপাতালের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জরুরী বিভাগে দৈনিক গড় রোগীর সংখ্যা ১শ’ ৮০ জন হলেও ডাক্তার ও নার্স সংকটে দায়িত্বরতদের হিমশিম খেতে হয়।
পেকুয়ায় জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারামারি নিত্তনৈমত্তিক ঘটনায় আহতদের চাপ জরুরী বিভাগের চিকিৎসা সেবার অন্যতম ব্যাঘাত বলেও অনেকে মনে করছেন। ওয়ার্ড়ে চিকিৎসারত অনেক রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ার্ডের বেড থেকে ডাক্তার দেখাতে অনেক সময় জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে রোগীকে নিয়ে আসতে হয়। নার্সরা কোনোভাবেই রোগীর বেডে গিয়ে সেবা দিতে রাজি হয়না। বার বার ধরনা দিয়েও তাদের কাছ থেকে সহজে সেবা নেয়া যায়না বলে আক্ষেপ করেছেন অনেকে। হাসপাতালের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফার্মেসীতে কখনো দারোয়ানকে পর্যন্ত ওষুধ দিতে দেখা গেছে। সুইপার, ঝাড়ুদারও অনেক সময় নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরে কিছুটা হলে স্বস্থিতে আছি। চিকিৎসকসহ সকল পদে জনবল চাহিদা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হলে জনবল সংকটের অবসান হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আরো বলেন ক্রমাগত বাড়তি রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনায় হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা দরকার এবং সে অনুযায়ী প্রক্রিয়া চলছে।
আজকালের খবর/ওআর