
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক অবস্থান, কার্যক্রম, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন এবং কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়াসহ তিন দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, গত ১৬ জুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও মূখপাত্র) নির্বাচনের লক্ষ্যে লুৎফর রহমানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মো. ওয়াহিদ উজ্জামান এবং মো. রাকিবকে নির্বাচন কমিশনার করে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু, ‘নির্বাচন কমিশনার তিনজনই একটি রাজনৈতিক দলের লোক এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু নয়’ মর্মে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন খুলনা বিভাগের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট, যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান, মাগুরা জেলার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, কুষ্টিয়া জেলার সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলার আহ্বায়ক আবু হুরায়রা, নড়াইল জেলার আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মেহেদীসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি পেশ করেন তারা। দাবি সমূহের মধ্যে- প্রথমত, নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করতে হবে, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, জেলার নেতৃবৃন্দকে প্রার্থীতার পাশাপাশি ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে। তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় যে সকল সমন্বয়ক কোনো রাজনৈতিক দলে নেই তাদেরকে প্রার্থীতা ও ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রভাব কোনো ভাবেই প্রত্যাশিত নয়।’
আমরা আরও লক্ষ্য করেছি যে, ‘উক্ত নির্বাচনে যে সকল নেতৃবৃন্দ গণঅভ্যুত্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন অর্থাৎ জেলা আহ্বায়ক কমিটি থেকে প্রার্থীতার সুযোগ রাখলেও ভোটাধিকার ব্যবস্থার কোনো সুযোগ রাখেনি, যা ঐক্যমতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শুরুতে তৎকালীন ১৫৮ জন সমন্বয়কের মধ্যে যারা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকেও প্রার্থিতা ও ভোটাধিকারের সুযোগ রাখেনি।’
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ‘যে সকল আপামর ছাত্র জনতা বিশেষ করে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, আলিয়া মাদরাসা, কওমি মাদরাসা কারিগরি প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীসহ যারাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল তাদের সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে অরাজনৈতিক ও লেজুড়বৃত্তিহীন- ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্ত মুক্ত একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘ইলেকশনে নির্বাচন এবং ভোটার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারাদেশে ১৫৮ জন সমন্বয়কের মধ্যে ২১ জন ভোট দিতে পারবে এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমি সবার কথা বলছি না কিন্তু যারা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকেও প্রার্থীতা ও ভোটাধিকারে রাখেনি। এছাড়া রাজনৈতিক পক্ষপাতী নির্বাচন কমিশনার বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনার গঠন করতে হবে এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।’
আজকালের খবর/ওআর