প্রকাশ: রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫, ৫:৩২ পিএম

রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভার মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের গৃহবধূ দীপা রানী পাল (২২) দুই পুত্র সন্তানের জননী। গত বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো। পরদিন বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরে ৩ যুবক দীপা রানী পালকে বাড়িতে রেখে যায়। এর কয়েক ঘন্টা পর ঘরের সিলিংয়ের হুকের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন দীপা রানী পাল।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মিঠুন পালের সঙ্গে ৬ বছর আগে দীপা রানী পালের বিয়ে হয়।তাদের ঘরে পাঁচ বছর বয়সী যমজ দুইটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিলো। একমাত্র শাশুড়ী সাধনা রানী পালের সঙ্গে দীপার খুব ভালো সখ্যতা ছিলো। তাহলে দীপা রানী কেনো আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন?
পরিবারের তরফ থেকে জানা যায়, কিছুদিন যাবত দীপা স্বামীর বাড়ির পাশের এলাকার গাড়ি চালক সাগর খানের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯টায় কাউকে কিছু না বলে সাগরের ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির বাইরে বের হন। সাগর প্রলোভন দেখিয়ে দীপাকে বাড়ি থেকে কিছু দূরে নিয়ে যায়। দীপার স্বামী মিঠুন পাল ও শাশুড়ী সাধনা রানী বাড়ির বাইরে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। ঘন্টা দুই পরে মো. সালাম, মো. মাসুদ ও মো. শাহাদাত নামের তিন যুবক রাস্তা থেকে মিঠুন পালকে ডাকতে থাকে। মিঠুন স্ত্রী দীপাকে খুঁজতে বের হয়, সে সময় বাড়ি ছিল না। শাশুড়ী সাধনা রানী তাদেরকে বলে মিঠুন বাড়ি নেই। এ সময় ওই তিন যুবক তার কাছে বৌমা কোথায় জানতে চাইলে সে (শাশুড়ী) জানালা বন্ধ করে দেয়। মিঠুন বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী (দীপা) কে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। রাত ১টার দিকে একটা ফোন নাম্বার থেকে মিঠুনকে কল করে টাকা দাবি করা হয়।
তবে সূত্র বলছে, দীপার প্রেমিক মো. সাগরের প্রলোভনে বাড়ি ছাড়ার কিছু সময় পরে ওই তিন যুবক দীপাকে তাদের আওতায় নিয়ে নেয়। এ সময় শাহাদাতকে সাগর ও দীপার কাছে রেখে সালাম ও মাসুদ দীপার শশুর বাড়ি চলে আসে। দীপার স্বামী মিঠুনের কাছ থেকে অর্থ না পেয়ে তারা ফিরে যায়। পরে তারা মোটরসাইকেল যোগে দীপাকে কালুখালী উপজেলার কোনো এক স্থানে নিয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে আরও দুই অজ্ঞাত ব্যক্তি যোগ দিয়েছিল। এক পর্যায়ে দীপা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তার কানের দুল, হাতের শাখা ও নগদ অর্থ নিয়ে নেয় তারা। সকাল হওয়ার আগেই দীপাকে স্বামীর বাড়ি রেখে যায় ওই তিন যুবক। ধারণা করা হচ্ছে দীপা নিজের সম্ভ্রম হারিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরদিন ভোরে দীপা রানী পালকে বাড়িতে রেখে যাওয়া তিন যুবকের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের অবস্থান জানতে চাইলে তারা জানে না বলে অস্বীকার করেন।
তবে প্রেমিক সাগর খানের মায়ের দাবি, তাদের ছেলের কাছে থেকে মেয়েটাকে কেড়ে নিয়ে যায় ওই তিন যুবক। এমনকি তারা তাদের ছেলেকে মেড়ে টাকা-পয়শা কেড়ে নিয়েছে। তাদের কারণেই ওই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এই ঘটনার দুইদিন পরে শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় দীপা রানীর (নিহত) পিতা বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে মো. সাগর খান, মো. সালাম, মো. মাসুদ ও মো. শাহাদাত এর নাম উল্লেখসহ ২/৩ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেছেন।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, দীপার পিতা বাদী হয়ে মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত করে এজাহার দায়ের করেছেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের মধ্যে যে কোনো একজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে সত্য বেড়িয়ে আসবে।
আজকালের খবর/ওআর