বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
দামুড়হুদায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল'র আগমনের শতবর্ষ : এখনো অরক্ষিত আটচাল ঘর
নজরুল ইসলাম, দামুড়হুদা
প্রকাশ: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫, ৩:৪১ পিএম
দামুড়হুদা উপজেলার  কার্পাসডাঙ্গায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমান্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রনে কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহাস্টস্ট্রিট থেকে সপরিবারে কার্পাসডাঙ্গার হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়িতে আসেন। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের  বাড়িতে শত বছর আগে স-পরিবারে এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ছিলেন তৎকালীন নদীয়া জেলার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সময় কার্পাসডাঙ্গা হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রায় দুই মাস এখানে অবস্থান থাকাকালীন কার্পাসডাঙ্গায় খ্রিস্টান চার্জ অব বাংলাদেশ এর নিচে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদীর ঘাটে বসে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন গান ‘কলসী গেল ডুবে’কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী এ কোন সোনার গাঁয়’ ও ‘পদ্ম গোখরো’ ব্যথার দান,   কবিতা লিচুচোর,গান, উপন্যাস গল্প  ও নাটক । 

প্রতিবছরে প্রশাসন ও স্থানীয়রা কবির জন্ম এবং  মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে থাকে।  ২০১৬ সালে কার্পাসডাঙ্গা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর স্মৃতি বিজড়িত আটচালা  ঘরে পাশে তৈরি হয় স্মৃতিস্তম। ২০২১ সালে কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত  আটচালা ঘর,  ভৈরব নদীর ঘাটের সিঁড়ি  কিছুটা সংস্করণ করা হয়। আটচালা ঘরটি মালিকানা হওয়ায় তার পরিবারের ও পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয়া বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমীরা কার্পাসডাঙ্গায় কবির নামে একটি হাসপাতাল, নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউট ও নজরুল পাঠাগার মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়েছেন । 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্রোহ ও তারুণ্যের কবি আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাকাব্যে ধুমকেতুর মতোই তার আবির্ভাব। কবি বিদ্রোহ করেছিলেন সকল অন্যায়, অসত্য, শোষণ-নির্যাতন আর দুঃখ-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। কবিতা লেখার অপরাধে কারারুদ্ধ হন। বন্দি করেও থামানো যায়নি তার লেখা। চরম আর্থিক অনটন আর দুঃখ-দারিদ্র্যেও তার বাল্যকাল কাটে বলে তাকে সবাই দুখু মিয়া বলে ডাকতো। কবি ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১২ সালে কবি আসানসোলের একটি হোটেলে স্বল্প বেতনে কাজ করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কবি পরিবারকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭২ সালে এবং কবিকে জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। তিনি প্রায় চার হাজারের মতো গান রচনা করেন। তার লেখা গান আজও খুব জনপ্রিয়। আমাদের রণ সংগীত ‘চল চল চল’ এর রচয়িতা তিনি। গনমানুষের এই কবি চিরকাল আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’ 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়িতে সপরিবারে এসেছিলেন। সাথে ছিলেন  স্ত্রী প্রমীলা, বড় ছেলে বুলবুল ও শাশুড়ি গিরিবালা।  কার্পাসডাঙ্গায় প্রায় দু’মাস অবস্থানকালীন কবি অবসর সময়ে মিশন স্কুলের বাগান সংলগ্ন ভৈরব নদীর স্নানঘাটে শান বাঁধানো সিঁড়িতে বসে উপন্যাস,  অনেক গান, কবিতা লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, লিচুচোর, ‘কলসী গেল ডুবে’, কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী এ কোন সোনার গাঁয়’ ও ‘পদ্ম গোখরো’ ব্যথারদান  ইত্যাদি। জাতীয় কবির স্পর্শ ধন্য সেই ভৈরব নদী পাড়ের স্নানঘাটের সিঁড়িটির অংশ বিশেষ এখনো বিদ্যমান আছে।

১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে কবি কার্পাসডাঙ্গায় দীর্ঘসময় অবস্থান করেন। ওই সময় কার্পাসডাঙ্গার ভৈরব নদের তীরে বসেই সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রচনা করেছেন। টানা দুই মাস তিনি আটচালা ঘরটিতে ছিলেন। তিনি থাকতেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের আটচালা ঘরে।  এখন তাঁর উত্তরসূরিরা নিজ অর্থ ব্যয় করে নজরুলের স্মৃতিঘেরা বাড়িটি টিকিয়ে রেখেছেন। ১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে সপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। সে সময় ভারতবর্ষে চলছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের হাওয়া বয়ছিল কার্পাসডাঙ্গায়ও। কবি নজরুল গঠন করেছিলেন 'শ্রমিক প্রজা কৃষক পাটি'। মূলত স্বদেশি আন্দোলনের নেতাদের উৎসাহ দিতেই পার্টির পক্ষে কবি কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। এখানকার জীবনযাত্রা ও পরিবেশ তাঁকে সাহিত্যকর্ম মৃত্যুক্ষুধা ও পদ্মগোখরো এবং লিচুচোর কবিতাসহ অনেক গান লিখতে সহায়ক হয়েছিল। স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িতে এখন থাকছেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের ছেলে প্রদ্যুত বিশ্বাসের দুই ছেলে-প্রকৃতি বিশ্বাস ওরফে বকুল বিশ্বাস ও মধু বিশ্বাস এখন ওই বাড়িতে থাকেন। যে ঘরে কবি থাকতেন সেই ঘরে সস্ত্রীক থাকেন বকুল বিশ্বাস। কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৯০ সালে কবির জন্মজয়ন্তী উৎসব পালন এবং নজরুল মেলাও বসেছিল এই কার্পাসডাঙ্গায়।২০১৬ সালে  কার্পাসডাঙ্গা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত আট চালা ঘরে পাশে স্মৃতিস্তমের উদ্বোধন করেন সাবেক  মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম । ২০২১ সালে কবি নজরুল এর স্মৃতি বিজড়িত  আটচালা ঘর ও ভৈরব নদীর ঘাটলার সিঁড়ি  কিছুটা সংস্করণ করেন তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার। এছাড়া কার্পাসডাঙ্গায়  ইউনিয়ন পরিষদ মোড়ে একটি  নজরুল চত্বর  অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে।   এই নজরুল চত্বর নির্মাণে কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
 
এ বছরে কার্পাসডাঙ্গায় বিদ্রোহী ও জাতীয়  কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর আসার শত বর্ষপূর্তি হবে। জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম প্রেমিকদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত  নির্দেশনা অনুযায়ী দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র দুইদিন ব্যাপী জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী  রোববার ও সোমবার কার্পাসডাঙ্গা নজরুল মঞ্চে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে  কবিতা আবৃতি সঙ্গীত ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্ম বার্ষিকী পালন করা হবে। 

এ বিষয়ে আটচালা ঘরের মালিক প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার সাবেকজেলা প্রশাসক সাইমা ইউনূস থাকাকালীন  সময় আমার জমির অধিকরণের মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছিলেন। পরে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে কিন্তু এর বাস্তবায়নের কোন রূপ পায়নি। পরিবার নিয়ে ঘরে থাকি একটু সমস্যা হয়। 

কার্পাসডাঙ্গা নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব ও কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক  জাহাঙ্গীর আলম টুটুল বলেন, নজরুল চত্বরে নির্মাণে বিগত সরকারের সময় অনিয়ম হয়েছে। একটা তদন্ত করার প্রয়োজন। আটচালা বাড়িটি অধিকরণ করে সরকারিভাবে নজরুল ইনস্টিটিউট, একটি কবির নামে হাসপাতাল করা দাবী জানায় 
সরকারের কাছে।  

কার্পাসডাঙ্গা নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের  সভাপতি ও কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি  শামসুল আলম বলেন, কার্পাসডাঙ্গায় কবি নজরুল ইসলামের নামে  নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউট ও নজরুল পাঠাগার মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানায় । 

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও কার্পাসডাঙ্গা জাতীয়  কবি নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে  চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন দুইদিন ব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ পালন করা হবে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ  জহিরুল ইসলাম বলেন,  জাতীয়  কবি নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে। র‍্যালি আলোচনা সভা বিভিন্ন  প্রতিযোগিতা  পুরস্কার বিতরণী ও সংগীত অনুষ্ঠান মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হবে। কার্পাসডাঙ্গায় এখানে সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেটি  যথাযথভাবে পালন করবে জেলা প্রশাসন ।

আজকালের খবর/বিএস 








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, যা জানালো আবহাওয়া অফিস
ঢাবির ৭১ শিক্ষকের মব সন্ত্রাস নিরসন ও প্রতিরোধে বিবৃতি
যেভাবে জানা যাবে এসএসসির ফল
ফের এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
পীরগাছায় সরকারি গাছ কেটে নিলেন দুই ইউপি সদস্য
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি না পাওয়ায় স্বামীকে ডিভোর্স, থানায় অভিযোগ
গোমতী নদীর পানিবৃদ্ধি ও বিপদসীমার আশঙ্কা: কুমিল্লায় জরুরি সতর্কতা জারি
খালিয়াজুরীতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপিত হলেও নেই কার্যক্রম
অভিনেত্রী আনোয়ারার সঙ্গে দিয়ামনি ই-কমিউনিকেশনের সৌজন্য সাক্ষাৎ
সন্ধ্যার মধ্যে ছয় অঞ্চলে ঝড়ের আভাস
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft