টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে একটি পাঠাগার থেকে পাঁচ শতাধিক বই নিয়ে গেছেন একদল যুবক। তাঁরা পাঁচটি বস্তায় ভরে বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। ওই যুবকদের দাবি, তাঁরা যে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে এসেছেন সেসব ধর্মবিরোধী। এসব বই পড়ে যুবসমাজ ধর্মবিরোধী হয়ে উঠছে। খেলাফত যুব মজলিসের এক নেতার নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার অভয়ারণ্য পাঠাগারে ঘটনাটি ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিন মাহমুদ শনিবার বিকেলে জানান, কারও অনুমতি ছাড়া বইগুলো পাঠাগার থেকে যুবকেরা নিয়ে এসেছেন। উভয় পক্ষকে নিয়ে রোববার বিকেলে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠক হবে। ইউএনও মো. শাহিন মাহমুদ বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই তিনি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাঠাগার পরিদর্শন করেছেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। পরদিনই বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু একপক্ষ শুক্রবার সময় দিতে পারবে না, আরেক পক্ষ শনিবার সময় দিতে পারবে না। পরে রোববার বিকেলে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দূর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, ‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’—এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে ২০১৫ সালে অভয়ারণ্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা দেড় শতাধিক। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে একদল যুবক পাঠাগারে এসে বই বস্তায় তুলতে শুরু করেন। তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেন, এখানে কোনো পাঠাগার থাকতে দেবেন না। বই পুড়িয়ে ফেলবেন। এ সময় ধনবাড়ী থানার একজন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হলে তাঁরা বইগুলো না পুড়িয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। পাঠাগার থেকে বই নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন খেলাফত যুব মজলিস ধনবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ। তাঁর সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক ছিলেন।
গোলাম রব্বানীর দাবি, অভয়ারণ্য পাঠাগার যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা নাস্তিক। ইসলাম, হিন্দুসহ সব ধর্মের বিরোধী। গত বুধবার এই পাঠাগারের সদস্য আশিক নোমান ফেসবুকে ধর্মবিরোধী একটি পোস্ট দেয়। গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা তাঁকে (আশিক নোমান) ডেকে কথা বলি। সে তাঁর ভুল বুঝতে পারে। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি, সে ওই পাঠাগারের সঙ্গে জড়িত হয়ে ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছে। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার আমরা ওই পাঠাগারে গিয়ে যে বইগুলো ধর্মবিরোধী মনে হয়েছে, তা নিয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি। এখানে বই লুটপাটের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
খেলাফত যুব মজলিসের নেতা গোলাম রব্বানীর অভিযোগের বিষয়ে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দূর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, ওই দিন যুবকেরা যে বইগুলো নিয়ে গেছে তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই রয়েছে। এ বইগুলোর কোনোটিই ধর্মবিরোধী নয়।
পাঠাগার থেকে যাঁরা বই নিয়ে গেছেন, তাঁদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের সভাপতি আবদুস ছাত্তার খান।
আজকালের খবর/ এমকে