
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ১০ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এই উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের মৃধাপাড়া গ্রামের মো. রবিউল আওয়াল সুমন এই রঙিন জাতের ভুট্টার চাষ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে কৃষিতে ডিপ্লোমা কমপ্লিট করেন রবিউল। এরপর কুমিল্লায় একটি কীটনাশক কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন তিনি। পরে নিজে কৃষিভিত্তিক উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ২০২০ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন এবং নিজের জমিতে মাল্টা, ধানসহ নানান ফসল চাষাবাদ শুরু করেন। চলতি অর্থবছরে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে রবিউল ইসলামকে রঙিন ভুট্টা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরে তিনি তার জমিতে এই পরীক্ষামূলক ভুট্টা চাষ শুরু করেন এবং সফলতা পান।
সরেজমিনে ভুট্টাক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, রবিউলের ১০ কাঠা জমিতে কালো, লাল, হলুদ, সাদা ও ধূসর রঙের ভুট্টা গাছে ঝুলে আছে। ভুট্টাক্ষেতের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের কৃষক ও সাধারণ লোকজন রঙিন ভুট্টা দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন এবং আগামীতে এই ভুট্টা চাষের জন্য রবিউলের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন তারা।
ভুট্টাক্ষেত দেখতে আসা আজিজুল নামে এক কৃষক বলেন, আমি সাদা ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু এখানে রঙিন ভুট্টা চাষ করছেন রবিউল। আমিও এই ভুট্টা চাষে আগ্রহী, কারণ এই ভুট্টার দাম বেশি। এইগুলোর মণ প্রায় দুই হাজার টাকা আর সাধারণ ভুট্টার এক হাজার টাকা মণ। তাই আগামীতে ভুট্টাটি চাষ করার পরিকল্পনা করছি আমি।
কৃষক মুসারুল ইসলাম বলেন, এখানে রঙিন ভুট্টা চাষ হচ্ছে। এটি খুবই আশ্চর্যজনক এবং দেখতেও ভালো লাগছে। শুনছি দামও বেশি, তাই পরবর্তীতে এই ভুট্টা চাষের জন্য রবিউলের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি।
রঙিন ভুট্টা চাষি কৃষক রবিউল আওয়াল সুমন বলেন, প্রথমে আমি কৃষি অফিসের একটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করি। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই রঙিন ভুট্টা চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হচ্ছিল চাষাবাদে। তারপর আস্তে আস্তে আবহাওয়ার সঙ্গে ম্যাচ করার পর ভুট্টার গাছগুলো খুব সুন্দর হয়ে ওঠে। যখন ফুল ও মৌচা আসে, তখন হঠাৎ করে দেখলাম একটি ভুট্টার ভেতরে বিভিন্ন রকমের কালার, লাল, কালো, সাদা, হলুদ। খুবই ভালো লাগে, এরপর কৃষি অফিসে জানালে তারাও খুব আনন্দিত হয়। এ ছাড়া আশপাশের মানুষজন দেখে তারাও খুব উদ্বুদ্ধ হয় এবং তারাও এই জাতের ভুট্টা চাষ করতে চায়। বীজগুলো তারা (কৃষক) অনেকে কিনে নিতে চাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, মৌচাসহ দিয়ে দেন, আমি জমি থেকে কিনে নিয়ে চলে যাবো।
তিনি আরো বলেন, ১০ কাঠা জমিতে রঙিন ভুট্টা চাষে আমার প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, আনুমানিক ১৪ মণের মতো ভুট্টা পাবো এবং তা দুই হাজার টাকা মণ দরে প্রায় ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।
রবিউল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটি নতুন জাতের ভুট্টা হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। এটি খেতে খুব সুস্বাদু, এজন্য সবাই আগ্রহী হয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আশা করি, আমাদের আশপাশে এই জাতের ভুট্টা আরো চাষ হবে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, এবার রাজশাহী বিভাগে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে গোমস্তাপুর উপজেলায় পাঁচটি ভুট্টা প্রদর্শনী পেয়েছিলাম। তার মধ্যে একটিতে আমরা রঙিন ভুট্টা চাষ করেছি। এই ভুট্টার বীজটি সাধারণত বাজারে পাওয়া যায় না। আমরা নীলফামারীতে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করেছিলাম। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করে আমরা এটা চাষ করেছি এবং মেশিনের মাধ্যমে ভুট্টা রোপণ করা হয়েছিল। সেটি এখন মোটামুটি হারভেস্টের পর্যায়ে চলে এসেছে। এই ভুট্টাটি নরমাল যে ভুট্টার জাত আছে তার চেয়ে অতি পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং আমরা বীজটি যেখান থেকে সংগ্রহ করেছিলাম তারাই আবার ভুট্টার মোচাটি কিনে নেবে। সে ক্ষেত্রে কৃষকের সুবিধা হচ্ছে, বীজটা তারা দেবে এবং উৎপাদন হওয়ার পর ভুট্টার মোচাটা তারাই সংগ্রহ করে নেবে। কৃষকের বিক্রয়ের যে বাড়তি চিন্তা সেটা থাকছে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা এটা প্রাথমিকভাবে গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছি। যদি এটা কৃষকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে আমরা সামনে আরো বীজ সংগ্রহ করবো এবং কৃষক পর্যায়ে আরো প্রচার করে সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করবো। এ ছাড়া রঙিন ভুট্টাটি উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং এতে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান বেশি। সে ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য উত্তম হতে পারে। তাই আমরা চেষ্টা করছি, এটিকে সম্প্রসারণ করে ও কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য।