
দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষ করতে যাচ্ছেন এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) রেজাউল হক। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন তার অধিনস্ত সহকর্মীবৃন্দ। তারা দ্র্রুত রেজাউল হকের অপসারণ চান। যদিও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন রেজা।
ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার জন্য এফডিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ আয়োজিত গণশুনানিতে রেজাউল হককে ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে অপসারণের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪-এ বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম বিষয়ে করণীয় নিরুপনের জন্য গঠিত কমিটিতে ৩১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়, এতে অধিকাংশ কর্মচারী ও কর্মকর্তা রেজাউল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি মো. হারুন অর রশিদকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়। পরে সেটা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও অভিযোগ আছে বর্তমান এমডির আস্থা নিয়ে আছেন বহাল তবিয়তে রেজা।
এছাড়াও গত ৯ এপ্রিল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএফডিসি’র সর্বস্তরের কর্মকর্তা, কলা-কুশলী ও কর্মচারীরা। ফ্যাসিবাদের দোসর রেজাউলের অপসারণসহ তার সকল দুর্নীতির শাস্তি কার্যকরে কালক্ষেপণ হওয়াতে কলা কুশলীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এফডিসিকে শান্ত করার জন্য ফ্যাসিস্ট রেজাউল হককে অবিলম্বে অপসারণ করে একটি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে, আনার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন কর্মচারী ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক জি এম সাইদ।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানায়, বর্তমান এমডি মাসুমা তানি যোগ দেওয়ার পরও রেজাউলের অপসারণসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উল্টো তাকে প্রাধাণ্য দিয়ে অফিস পরিচালনা করছেন বর্তমান এমডি। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ বর্তমান এমডি নিজেই ফ্যাসিবাদের দালাল হওয়াতে আরেক দোসর রেজাউল হকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ঘনিষ্ট হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নীতিবহির্ভূতভাবে ওই সময়কার ৩১ বছর ২ মাস বয়সী রেজাউলকে নিয়োগ দেন। যা ছিলো সরকারি চাকুরি বিধিমালার লংঘন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাবেক আরেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ সংসদ ভবনে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেন আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে। এরপর, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুইজন এমপির অধীনে সংসদে কাজ করেন ফ্যাসিবাদের দালাল হিসেবেখ্যাত রেজাউল। কিন্তু, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে নানা অপকর্মের বিষয়ে জানার পর ২০০৪ সালে তাকে ফের এফডিসিতে ফেরত পাঠানো হয়। ২০০৮ সালে ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় এফডিসিতে টাস্কফোর্সের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে স্থান পেয়ে স্বৈরাচারের দোসর রেজাউল বিএনপিমনা পরিচালক ও প্রযোজকদেরকে হয়রানিসহ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এফডিসির অভ্যন্তরের একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুটি প্রমোশনসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানা রকমের অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রেজাউল।
এরমধ্যে পরিচালক (সংগ্রহ) থাকার সময় নেগেটিভ ক্রয় দুর্নীতিসহ অনেক ক্রয় দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। আর অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) এর দায়িত্বে থাকাকালীন প্রয়াত শেখ মুজিবের নামে বায়োপিক নির্মাণের সময় কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও রেজাউলের নামে অভিযোগ রয়েছে। এফডিসি’র হিসাব শাখা নিরীক্ষার পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবেখ্যাত রেজাউলের সকল দুর্নীতির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন রেজাউলের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
জুলাই আন্দোলনের পর ভোল পাল্টিয়ে ফ্যাসিবাদের দালাল রেজাউল বর্তমান সরকারের সুবিধা নেওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন বিএফডিসি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে রেজাউল হককে কল করা হলে তিনি ব্যাক করে ন।
অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এটা মিথ্যে অপবাদ আমার বিরুদ্ধে। যারা গণশুনানিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তারা অধিকাংশই ছুটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। আমি যা করেছি চাকরির নিয়ম মেনেই সেগুলো প্রয়োগের চেষ্টা করেছি। কাউকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়াতেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
রেজা বলেন, সরকার আমাকে বসিয়েছে কাজ করার জন্য। কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়। শৃংখলা ঠিক রাখতে গিয়ে কঠোর হতে হয়েছে, এটাই আমার অপরাধ। বাইরে থেকে পার্টি (প্রযোজক) আমাদের লোকজনের ব্যাপারে অভিযোগ দেয়, এগুলো নিয়ে কথা বলাটাই আমার অপরাধ।
আজকালের খবর/আতে