প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৩৪ PM

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি আঘাত হানে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে। ভূমিকম্পনের ফলে থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে জানমালের ক্ষতি হলেও এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী আকার ধারণ করে মায়ানমারের মান্দালয়ে। শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মুহুর্তেই অসংখ্য ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ও ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধস্থাপনা বিধস্ত হয়। হতাহত হয় হাজার হাজার এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি জুমার নামাজ আদায়কালে আঘাত হানায় বিধ্বস্ত মসজিদের নিজে চাপাপড়ে বহু মুসল্লি নিহত ও আহত হন। প্রতিবেশী দেশের এমন বিপদকালে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় মায়ানমারের ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের প্রতি মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তিন পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী থেরোবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু সংগঠন ‘পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ’। মায়ানমারে জীবন বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ প্রদান করেছে চৌদ্দ লক্ষ টাকার নগদ আর্থিক সহায়তা। পুরো টাকাই পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ এর অর্ন্তভূক্ত সম্মানিত সদস্যগণ, পুণ্যবান ও পুণ্যবতী উপাসক-উপাসিকাদের ব্যক্তিগত দান থেকে প্রাপ্ত। গত ২১ এপ্রিল পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ এর একটি প্রতিনিধি দল নগদ অর্থ সহায়তার ১৪ লক্ষ টাকা তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ে মো’র হাতে। এসময় রাষ্ট্রদূতের হাতে একটি শোকপত্র প্রদান করা হয় যাতে ভিক্ষু সংঘের পক্ষ থেকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
অনাড়ম্বর এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন উপসংঘরাজ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ এর সম্মানিত সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরো, সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত লোকমিত্র থেরো, সহ-সভাপতি ভদন্ত সম্ভোধি মহাথেরো, যুগ্ম সম্পাদক ভদন্ত প্রজ্ঞালোক মহাথেরো, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ভদন্ত সংঘরত্ম মহাথেরো, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ভদন্ত করুণা বংশ থেরো, দপ্তর সম্পাদক ভদন্ত বুদ্ধজ্যোতি থেরো এবং ভদন্ত বেদরত্ম থেরো প্রমুখ।
পার্বত্য ভিক্ষুসংঘের উপসংঘরাজ ও বিশিষ্ট বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো সংঘের পক্ষ থেকে প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পে নিহতদের সর্বোচ্চ পারলৌকিক সদ্গতি ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনা ছাড়াও তাদের উদ্দেশে পুণ্যদান করেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকালে উপসংঘরাজ ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানান, বাংলাদেশে ত্রিপিটক শাস্ত্র পঠন-পাঠনের উপযোগী বিদ্যায়তন এবং ত্রিপিটক অধ্যয়নের জন্যে উপযুক্ত বই পুস্তকের খুবই অভাব। এছাড়া উপযুক্ত ভাবনা কেন্দ্র না থাকায় ধ্যান ভাবনার ক্ষেত্রেও ভিক্ষু এবং বাংলাদেশী বৌদ্ধ জনগণ দিনযাপন করছে অতৃপ্তি ও অপ্রাপ্তির আবহে। উপসংঘরাজ ভেন. প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আরও জানান, মহাজী শেয়াড ও লেডী শেয়াড এবং উপান্ডিতা মহাথের মহোদয়ের সুচিন্তিত সুলিখিত বইগুলো এখানে একেবারেই পাওয়া যায় না। তিনি মায়ানমারে মুদ্রিত ত্রিপিটক পাওয়ার ব্যাপারে মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের বদান্যতা কামনা করেন। তদুত্তরে রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ে মো বাংলাদেশী বৌদ্ধদের জন্যে যে কোন প্রকার সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
আজকালের খবর/ এমকে