
২০১২ সালে কর্পোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে তা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
কর্পোরেট ট্যাক্স ফাঁকি মোট ট্যাক্স ফাঁকির ৫০ ভাগ। ২০২৩ সালে মোট ট্যাক্স ফাঁকির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল করপোরেট ট্যাক্স।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ‘করপোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেট এলেই বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপ এনবিআর-এর ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে থাকে। এর ফলে রাজস্ব আদায় নিয়ে সরকারের যে লক্ষ্য থাকে, তা বাস্তবায়ন হয় না; খোলস হিসাবে থেকে যায়। ভালো ফল নিয়ে আসে না।
তিনি বলেন, কর কাঠামো পুরোপুরি রাজনৈতিক বিবেচনা নির্ভর। রাজনৈতিক কারণে সুবিধা দেওয়া হয়, এটা বন্ধ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে খাত ভিত্তিক প্রণোদনা দেওয়া হয়, এটা বন্ধ করে প্রয়োজন নির্ভর করতে হবে। যেসব দেশের উন্নয়ন ঘটেছে, সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ট্যাক্স বেশি ভঙ্গুর। এই অবস্থার উত্তরণ না ঘটলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
মূল উপস্থাপনায় সিপিডির সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে কর্পোরেট ট্যাক্স জিডিপির ৬ শতাংশ, উন্নত দেশগুলোতে এ হার ১৫ শতাংশ। এটা আন্ডার রিপোর্টিংয়ের কারণেও হতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত কর্পোরেট ট্যাক্সকে নামিয়ে আনা। তাহলে কর্পোরেট ট্যাক্স যে ৩১ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশের মধ্যে আছে, সেটা ২৩ শতাংশে নামিয়ে এনেও লক্ষ্যপূরণ করা সম্ভব।
যেসব কোম্পানি ট্যাক্স দিচ্ছে না তাদের চিহ্নিত করতে হবে। রিটার্ন না দেওয়া একটি অপরাধ হিসাবে দেখার পরারমর্শ দেওয়া হয় সিপিডির মূল উপস্থাপনায়। এতে বলা হয়, এটা করা গেলে ট্যাক্স দেওয়া বৃদ্ধি পাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান লোকশান দিলে রিটার্নে সেটাই লিখবে; রাজস্ব দেবে না। মুনাফা করলে সেটাই লিখবে, রাজস্ব দেবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের ক্ষেত্রে প্রথমে লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর বিল খেলাপির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। রিটার্ন না দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা করা যেতে পারি, যাতে সবাই রিটার্ন দেয়।
তামিম আহমেদ আরও বলেন, বর্তমান দুই লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানির মধ্যে ৯ শতাংশ রিটার্ন দেয়। এটি ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫৯ শতাংশ করা যেতে পারে। এটা করতে পারলে ২০২৯ সালে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বন্ধ হবে, তখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এই বর্ধিত সংখ্যক ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।
রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। সবার আগে দুর্নীতি দূর করার পরামর্শ দেওয়া হয় সিপিডির উপস্থাপনায়। বলা হয়, দুর্নীতি দূর না করা হলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না; বরং সমস্যা আরও বাড়বে।
অটোমেশনের পথে ঘুষ অন্যতম প্রধান বাধা—এমন তথ্য উঠে আসে সিপিডির গবেষণায়। যেসব কোম্পানি ট্যাক্স রিটার্ন দেয় তাদের ৪৫ শতাংশই বলছে, ঘুষ দিতে হয়। সংস্কার করতে হলে আগে এই দুর্নীতি দূর করতে হবে। আবার রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই পক্ষই ম্যানুয়ালি দিতে চায়। রাজস্ব বোর্ডের লোকজন ঘুষ নিয়ে রিটার্ন দেওয়া পছন্দ করেন, আবার ব্যবসায়ীরা ঘুষ দিয়ে কম রাজস্ব দিতে পছন্দ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর নুসহাত জাবিন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রুপ চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
আজকালের খবর/বিএস