শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল হামাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৪:১৬ PM আপডেট: ১৮.০৪.২০২৫ ৪:১৮ PM
গাজায় ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানতে ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দিয়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। গতকাল বৃহস্পতিবার হামাসের প্রধান আলোচক এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন, হামাস যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি ‘গঠনমূলক’ চুক্তি চায়।

এই বক্তব্য এমন সময় এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে সেখানকার সিভিল ডিফেন্স বাহিনী। নিহতদের বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এই হামলার ঘটনার তদন্ত করছে।

হামাসের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবের লিখিত জবাব মধ্যস্থতাকারীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রস্তাবে ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে হামাসের হাতে থাকা ১০ জীবিত জিম্মির মুক্তির কথা বলা হয়েছিল।

হামাসের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রস্তাবে বলা হয়, এক হাজার ২৩১ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যে সহায়তা গত ২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অবরোধের মুখে রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্র হওয়ার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়, যা হামাস সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

টেলিভিশন বিবৃতিতে হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেন, ‘আংশিক চুক্তিগুলো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাকে আড়াল করার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে… আমরা এই নীতির অংশীদার হব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘হামাস একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায়, যেখানে এক দফায় বন্দিবিনিময়, গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার এবং পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরুর কথা থাকবে।’

এর আগে, ১৯ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি কার্যকর হলেও দুই মাসের মধ্যে তা ভেঙে যায়। ইসরায়েল প্রথম ধাপ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়, কিন্তু হামাস জো বাইডেনের প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার দাবি জানায়। এরপর গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে।

ইসরায়েলকে দোষারোপ করল কাতার

যেসব দেশ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিল—তাদের অন্যতম কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তিনি বৃহস্পতিবার মস্কো সফরে ইসরায়েলকে চুক্তিভঙ্গের জন্য দোষারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা কয়েক মাস আগে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলাম, কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইসরায়েল সেই চুক্তি মানেনি।’

আল-মাওয়াসিতে শরণার্থীশিবিরে হামলা

সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের শহরের আল-মাওয়াসি এলাকায় দুটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে আরো ২৩ জন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসরায়েল যখন এই এলাকাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করেছিল, তখন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। এর পর থেকে এই এলাকা একাধিকবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।

একজন বেঁচে যাওয়া নারী ইসরা আবু আল-রুস বলেন, ‘আমরা শান্তভাবে তাঁবুতে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা লাল আলো ছড়াচ্ছে—তারপরই তাঁবুটি বিস্ফোরিত হলো, আর আশপাশের সব তাঁবুতে আগুন ধরে গেল।’

বাসাল আরো জানান, গাজার বেইত লাহিয়া শহরে একটি এবং আল-মাওয়াসির কাছে আরেকটি শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলায় আরো ৯ জন নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, জাবালিয়া এলাকায় দুটি হামলায় আসালিয়া পরিবারের কমপক্ষে সাত সদস্য এবং একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ছয়জন নিহত হয়েছেন। গাজা শহরে গোলাবর্ষণে আরো দুইজন নিহত হন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা জাবালিয়ায় হামাসের একটি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল আরো দাবি করেছে, তারা গাজার ৩০ শতাংশ এলাকায় বাফার জোন তৈরি করেছে।

জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের উদ্বেগ

জাতিসংঘ জানিয়েছে, নতুন করে শুরু হওয়া অভিযানের পর প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি আবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা এটিকে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছে।

রেড ক্রস ঘাঁটিতে হামলা, খাদ্য-ওষুধ সংকট

হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজার ২৪ লাখ মানুষকে অভুক্ত রাখার চেষ্টা করার অভিযোগ করেছে, বিশেষ করে যখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ঘোষণা দেন যে তারা গাজায় ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে দেবে না।

হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এটি প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধাপরাধের স্বীকৃতি।’ জাতিসংঘ জানায়, গাজায় এখন খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানায়, বুধবার গাজায় তাদের একটি ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে—গত তিন সপ্তাহে এটি দ্বিতীয়বার। তারা এতে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

গাজায় মৃত্যু ৫১ হাজার ছাড়াল

গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় অন্তত এক হাজার ৬৯১ জন নিহত হয়েছে বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ০৬৫ জন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

সূত্র: এএফপি।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সরফরাজের পদত্যাগ
সিরাজগঞ্জে চীন বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
নির্বাচন দেরিতে হলে দেশের মানুষ হতাশায় ভুগবে: রিজভী
মিঠাপুকুরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মতবিনিময় সভা
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপি-এনসিপির পাল্টাপাল্টি জনসভা ঘিরে উত্তেজনা
ছোট্ট পাঠক সাবিহা : পত্রিকা পড়া যার নেশা
ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা টানু মল্লিক গ্রেপ্তার
রিকশা উল্টে নালায় পড়ে নিখোঁজ ৬ মাসের শিশু
কোণঠাসা কোক-পেপসি, জায়গা নিচ্ছে দেশীয় পানীয়
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft