প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:৫১ PM
ব্রি উদ্ভাবিত ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম ফার্টিলাইজার অ্যাপ্লিকেটর’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোপণের খরচ ২০-২৫ ভাগ কমানো এবং ধানের ফলন ১০-১৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সদর দপ্তরে ‘ভ্যালিডেশন অ্যান্ড আপস্কেলিং অব রাইস ট্রান্সপ্লান্টিং অ্যান্ড হারভেস্টিং টেকনোলজিস ইন দ্য সিলেক্টেড সাইটস অব বাংলাদেশ (ভিআরটিএইচবি)’ শীর্ষক প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়। কেজিএফ (কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন) বিকেজিইটির (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা এন্ডাউমেন্ট ট্রাস্ট) অর্থায়নে ব্রির ফার্ম মেশিনারি এন্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি (এফএমপিএইচটি) বিভাগ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে ট্রেনিং কমপ্লেক্স ভবনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. নাজমুন নাহার করিম, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার, ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মুন্নুজান খানম, ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সম্পদ) ড. মো. মনোয়ার করিম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রির এফএমপিএইচটি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান ড. মো. দুররুল হুদা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিআরটিএইচবি প্রকল্পের প্রধান গবেষক এবং এফএমপিএইচটি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
কর্মশালায় প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ব্রি উদ্ভাবিত ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম ফার্টিলাইজার অ্যাপ্লিকেটর’ প্রযুক্তির মাধ্যমে তিন বছরের ব্যবধানে হবিগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মৌসুমে মোট ১৮টি মাঠ পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, মাটির গভীরে ২০-৩০ ভাগ পর্যন্ত কম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে যন্ত্রচালিত রোপণ পদ্ধতিতে ধানের ফলন সর্বোচ্চ পাওয়া যায়। পাশাপাশি, এই প্রযুক্তির ফলে রোপণের খরচ ২০-২৫ ভাগ কমানো এবং ধানের ফলন ১০-১৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, মেশিনের মাধ্যমে মাটির গভীরে সার প্রয়োগ করে নাইট্রোজেনের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব, যা পরিবেশগত দিক থেকেও টেকসই। যন্ত্রটির মাঠ দক্ষতা জমি ভেদে ৫০ থেকে ৮১ শতাং পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা ধানের চাষে সময় ও শ্রমের সাশ্রয়ে কার্যকর। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে ৮০ শতাংশ ইউরিয়া সার মাটির গভীরে প্রয়োগের ক্ষেত্রে, যেখানে বিসিআর (লাভ-ব্যয় অনুপাত) ১.৭৮ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, উক্ত প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরস্থ ব্রি সদর দপ্তরে পরিচালিত এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদনে ১০০-১১০ গ্রাম/ট্রে বীজ ব্যবহার করলে হাইব্রিড ধানে চারা সবল হয় ও যন্ত্রচালিত রোপণে হিল মিসিং অনেক কম হয়।
প্রধান গবেষক আরো জানান, ২০২১-২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ মৌসুমে মোট ২২টি মাঠ পরীক্ষায় Yanmar, Kubota, Zoomlion, Lovol, Marksan, Daedong সহ মোট আটটি ব্র্যান্ডের হেড-ফিড ও হোল-ফিড কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন পরীক্ষা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, হেড-ফিড হারভেস্টারে ধানের ফলনোত্তর অপচয় (০.৭৩ শতাংশ) হোল-ফিড কম্বাইন হারভেস্টারের (১.১৭ শতাংশ) তুলনায় কম। তবে, কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন অধিক গতিতে চালালে ধানের অপচয় সর্বোচ্চ ৫.১৮ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, জমির দৈর্ঘ্য ৫০-৬০ মিটার বা তা অধিক হলে যন্ত্রের কার্যক্ষমতা এবং দক্ষতা অনেক বেড়ে যায়। চালকের দক্ষতা, চালানোর সময় গতি, ধানের ঘনত্ব, কর্তনের উচ্চতা ইত্যাদি মেশিনের কার্যক্ষমতা এবং দক্ষতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যবহার কৃষকের শ্রমনির্ভরতা এবং খরচ ৪০-৫০% পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব। মূল প্রবন্ধে আরো জানানো হয়, আগাছা নিয়ন্ত্রণে ব্রি উদ্ভাবিত মাল্টিরো পাওয়ার উইডার যন্ত্রের মাধ্যমে ১৬টি ট্রায়াল পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, ৮৯.২২% পর্যন্ত আগাছা দমনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যন্ত্রটি। এই যন্ত্রের মাধ্যমে মৌসুমভেদে হেক্টরপ্রতি গড়ে ছয় থেকে দশ হাজার টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
আজকালের খবর/আরইউ