শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
বিনাশ
ফারজানা ইয়াসমিন
প্রকাশ: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ৩:৪৭ PM আপডেট: ২২.০৩.২০২৫ ৪:২০ PM
গ্রামে থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। মাস্টার্স শেষ করে একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরি করছি। গ্রামে আমাদের ভালোই নাম-ডাক। বড় চাচা দুইবার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। উনি মারা গেছেন চার বছর হয়। বাবা এখনো গ্রামের বিচার-সালিশ করেন। যতটা পারা যায় ন্যায় বিচার করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজনীতি ঢুকে যায় বিচারে। বিচার তো একা বাবা করেন না। সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ আরো কত মানুষ আছেন। বিচারের বেলায় যাদের টাকা পয়সা আছে তালগাছ তাদের হয় বেশির ভাগ সময়। 

আজ একটা সালিশ বসেছে কাচারিতে। আমি খুব একটা এসবে যাই না। কারণ অনিয়ম অন্যায় দেখলে এখানো মাথা নষ্ট হয়ে যায়। ভার্সিটিতে পড়ার সময় রাজনীতি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মা কসম দিয়ে দিল কান্নাকাটি করে। তাই অসুস্থ মাকে আর কষ্ট দিতে চাইনি। মায়ের ভয় ছিল ছেলেকে নিয়ে। বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলাম। শোনার আর একটা কারণ হলো রিমার বোন আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম।

দুই দিন আগে স্কুল থেকে একটা দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা ক্লাস শেষে বাড়ি যাচ্ছিল। প্রাইভেট পড়ে বাড়ি যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। প্রতিদিন ওর বাবা নিয়ে যায়। কিন্তু কয়দিন ধরে তার বাবা অসুস্থ। তাই সে একাই যাচ্ছিল। সামনে পরীক্ষা তাই রিমা মায়ের কথা না শুনেই পড়তে যায়। রিমা ও ওর বান্ধবী কলি অনেকটা পথ এক সাথে আসে। বাকি পথ একাই আসছিল রিমা।

বছর খানেক হলো বড় এক ব্যবসায়ীর ছেলে শাহিন রিমাকে জ্বালাচ্ছিল। তাই তার বাবা সাথে যেত। ঠিক করেছিল এসএসসি পাস করলেই ঢাকায় পাঠিয়ে দিবে। গ্রামের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ঢাকায় অনেক কলেজে এখন হোস্টেল আছে। মেয়ে দুটোকে পড়াতে চেয়েছিলেন রিমার বাবা। কিন্তু বড় মেয়ে রিমিকে বিয়ে দিয়ে দেয় অনার্স পড়া অবস্থায়। ভালো ছেলে পাওয়ার জন্য বিয়ে দিয়ে দেয়। তাছাড়া গ্রামের মানুষ ও আত্মীয়স্বজন নানান কথা বলা শুরু করেছিল। জামাই খুব ভালো তাই রিমিকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ায়। এখন চাকরিও করছে রিমি ঢাকায়। 

শাহিন রিমাকে পছন্দ করে বলে শাহিনের মা একবার এসেছিল শাহিন আর রিমার বিয়ের কথা বলতে। কিন্তু রিমার বয়স অনেক কম। তাছাড়া শাহিন মাত্র এইচএসসি পাস করা ছেলে। তার সাথে রিমার বাবা মা কোনদিনই রিমার জন্য বিয়ে দিবে না। রিমা পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে। রিমার ইচ্ছা বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করবে। কারণ তার কোনো ভাই নাই। 

সেদিন শাহিন সুযোগ পায় রিমাকে কাছে পাওয়ার। স্কুল থেকে শাহিন রিমার উপর নজর রাখছিল। কলি চলে যাওয়ার পর শাহিন রিমার সামনে আসে। প্রথমে রিমাকে বুঝাতে চেষ্টা করে যাতে সে শাহিনের সাথে সম্পর্ক করতে রাজি হয়। কিন্তু রিমা রেগে যায় শাহিনকে সরে যেতে বলে। শাহিন রেগে রিমার হাত ধরে আর কাছে টানতে থাকতে। রিমা রাগে কষে একটা চড় মারে শাহিনের গালে। শাহিন আরো বেপরোয়া হয়ে যায়। টানাটানি করতে থাকে রিমাকে তার সাথে কোথায় যেন নিয়ে যেতে চায়। এবার রিমা ভয় পায় আর চিৎকার করতে থাকে। তখন কাছাকাছি যারা ছিল তারা ছুটে আসে। লোকজন দেখে শাহিন তাড়াতাড়ি পালায় সেখান থেকে। রিমাকে তারা বাড়িতে দিয়ে আসে।
রিমার সব কথা শুনে পরের দিন রিমার বাবা আমার বাবার কাছে আসে বিচার নিয়ে। আজ সেই বিচার হচ্ছে। রিমা আমাদের বাড়িতে ভিতরে মায়ের কাছে বসে আছে। শাহিন আসেনি। সে নাকি তার নানার বাড়িতে এক সপ্তাহ আগেই গেছে। বুঝতে পারছি সব সাজানো গল্প। শাহিনের বাবা এসেছে বিচারে। তার একই কথা শাহিন এলাকায় নেই কয়েকদিন হলো। এসব অন্য কেউ করেছে। আর নয়তো শাহিনকে ফাঁসানো হচ্ছে। শাহিন বড়লোকের ছেলে তাকে তো কত মেয়েই বিয়ে করতে চায়।

রিমাকে ডাকা হলো জানতে চাওয়া হলো শাহিন না অন্য কেউ রিমার সাথে খারাপ আচরণ করেছিল? রিমা স্পষ্ট করে জানায় ওটা শাহিন ছিল। অন্য কেউ না। সে তার বিচার করেই ছাড়বে। এখানে বিচার না পেলে থানায় যাবে। রিমার বাবা রিমাকে থামতে বললেন। শাহিনের বাবা রেগে গিয়ে রিমার সামনে এসে বলল, এত বড় সাহস তোমার আমার ছেলেকে পুলিশের ভয় দেখাও! তোমার আন্দাজ নাই আমি কে। ভালোয় ভালোয় চলে যাও। যার সাথে মেলামেশা করো তার নাম প্রকাশ করো মেয়ে। এখনো সময় আছে। 

রিমার বাবা এবার রেগে গিয়ে শাহিনের বাবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।  বিষয়টা আরো খারাপ হবে বুঝতে পারছি। তাই বাধ্য হয়ে আমি ভিতরে গিয়ে রিমার বাবাকে শান্ত হতে বললাম। আমাকে বাবা ও চাচার জন্য সবাই ভালো মনে করে ও সম্মান করে। তাছাড়া এলাকার ছোট ভাইরা অনেক মানে আমাকে। বড়রা ভালোবাসে সবাই। 

আমি সরাসরি বললাম, ঠিক আছে শাহিন যদি দোষী নাও হয় তবুও তার এখানে থাকার কথা ছিল। কাল তাকে আসতে বলবেন। যদি কাল কোন সঠিক ফলাফল না আসে তো সত্যি আমি রিমাকে নিয়ে থানায় যাবো। সবাই বুঝতে পারলো আমি যুক্তিসঙ্গত কথা বলেছি। তাছাড়া এটার একটা সমাধান হওয়ার জরুরি। দিন দিন গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এবার শাহিনের বাবা একটু নরম হয়ে বলল, দেখ বাবা তুমি এখানে থাকো না। এদের বিষয়ে কিছুই জানো না। এরা টাকার জন্য এসব করে। আমার মাথা গরম হয়ে গেল।

আমি বললাম, আমি এদের চিনি। অনেক আগে থেকে এবং খুব ভালো করে। এই এলাকায় জন্মে বড় হয়েছি চাচা। এখন এখানে না থাকলেও এলাকার পাই টু পাই খবর পাই। আর এটা শুধু রিমার একার বিষয় না। এরপর যেন রিমার মতো কারো সাথে এমন করার কেউ সাহস না পায়। তার ব্যবস্থা আমি করে যাবো। আর রিমা আমার ছোট বোনের মতো।

আমি বললাম, এমন জঘন্য কাজ যদি ওর সাথে হয়ে থাকে। তাহলে এর বিচার আমি করেই যাবো। একটা এলাকায় সেই এলাকার মেয়ে একা হাঁটতে পারবে না। এমন খারাপ অবস্থা আমি আমার এলাকার দেখতে চাই না। যেখানে আমার বাপ চাচারা বিচার করে। এলাকার প্রতি তাদের দায়িত্ব আছে। আজ একজনের সাথে হয়েছে কাল দশ জনের সাথে হবে। আমার মা-বোনও আছে এই এলাকায়। এভাবে এত বড় অপরাধের শিকার একটা মেয়ে হতে পারে না। এরচেয়ে অনেক বেশি খারাপ কিছু হতে পারে এরপর। 

আলোচনা শেষে সবাই চলে যাচ্ছিল আমি রিমা আর তার বাবাকে থাকতে বললাম। রিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার সাথে পড়ে এমন ভালো কোনো বন্ধু আছে দুই একজন? রিমা বলল, ভাইয়া আপনাদের পাশের বাড়ির বাবু তো আমার সাথে পড়ে। ও জানে শাহিন আমাকে বিরক্ত করে। কিন্তু শাহিনকে সবাই ভয় পায়। বড়লোকের ছেলে বেশ উগ্র। তাই ওর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে চায় না। তবে আপনি জিজ্ঞেস করলে বলতে পারে। 

আমি বললাম কাল তোমার বন্ধু কলিকেও আসতে বলবে। রিমা বলল, আমি বলব। কিন্তু কলিকে ওর বাবা আসতে দিবে কিনা জানি না। আমি রিমার কাছে থেকে কলির মোবাইল নম্বর নিলাম। বললাম, সেটা আমি দেখব। ওনারা চলে গেলেন। যাওয়ার সময় আমার মোবাইল নম্বর দিয়ে দিলাম রিমার বাবাকে। বললাম, কোনো দরকার হলে জানাবেন। 

আমি কলিকে কল করে আমার পরিচয় দিয়ে বললাম, কাল রিমার বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় আসতে পারবে কিনা? কলি ওর বাবার সাথে কথা বলতে বলল আমাকে। আমি কলির বাবার সাথে কথা বলতে চাইলাম। তোমার বাবা থাকলে ওনাকে মেবাইলটা দেও। আমি কলির বাবাকে সালাম দিয়ে সব খুলে বললাম।

উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, অবশ্যই যাবে কলি। আজ অভদ্র ছেলেটা রিমার সাথে এমন করেছে। কাল আমার মেয়ের সাথেও অন্য কেউ এমন দুর্ব্যবহার করতে পারে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাছাড়া রিমাও আমার মেয়ের মতো। আমার মেয়ে কলির বন্ধু সে। ছোট থেকে একই সাথে পড়ালেখা করেছে। রিমার বাবা বড় ভালো মানুষ বাবা। তুমি যে কোন সাহায্য পাবে আমার কাছে। কাল আমি নিজে কলিকে নিয়ে যাবো বিচারে। আমি তাকে ধন্যবাদ দিলাম। এতটা আশ্বাস দেওয়ার জন্য। দরকার হলে বলব বলে জানালাম। মনে মনে অনেক খুশি হলাম। সত্যি কত ভালো মানুষ এখনো সমাজে আছে। 

রিমার বোন রিমি তার বাবার কাছে আমার কথা শুনে আমাকে কল দিয়ে সব কিছু বলল। অনুরোধ করলো যেন সঠিক বিচার হয়। অনেক দিন পর বন্ধুর সাথে কথা হলো। ওকে বললাম, চিন্তা কর না। আমি এর বিচার করেই ঢাকায় যাবো। রিমার বন্ধু বাবু আমাদের পাশের বাড়ির চাচার ছেলে। ওকে ডেকে পাঠালাম। ও বেশ ভয়ে আছে মনে হলো। জিজ্ঞেস করলাম, এমন ভয় পাচ্ছিস কেন? কাছে আয়। রিমা কী তোর বন্ধু? ও মাথা নেড়ে বলল, আমরা একই সাথে পড়ি। আমি বললাম, তাহলে তো বন্ধুই হলো। এটা বলতে লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমরা তো ছেলে মেয়ে বন্ধু ছিলাম। আর আজও বন্ধু আছি। তোদের মতো এমন ছিলাম না।

ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কী জানিস রিমা আর শাহিনের ব্যাপারে? ও চুপ করে আছে। ওকে বললাম, ভয় কেন পাচ্ছিস? শাহিন তোর কিছুই করতে পারবে না। আর ফেসবুকে দেখি অনেক বড় বড় কথা লিখিস। যা মনে নাই তা কেন বলিস? এতটুকু দায়িত্ব নেই তোর বন্ধুর জন্য? সব জেনেও চুপ করে থাকবি? মেয়েটার নামে বাজে কথা বলে গেছে শাহিনের বাবা। কাল যদি শাহিনের দোষ খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে কাল থেকে রিমা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। আজ রিমার সাথে এসব হচ্ছে কাল তোর বোনের সাথে এগুলো হবে। তখন চুপ করে থাকতে পারবি তো? আজ যেমন তুই এই জঘন্য অপরাধের বিচারে সাহায্য করছিস না। কাল তোর বেলায় কেউ সাহায্য করবে না।

এবার বাবু চুপ থাকতে পারল না। বলল, শাহীন ভালো ছেলে না। বাবা বলেছে এসব ঝামেলায় না যেতে। শাহিনের বাবার সাথে আমার বাবার সম্পর্ক ভালো। তাই চুপ ছিলাম। শাহিন অনেক আগে থেকেই রিমাকে বিরক্ত করে। রিমা পাত্তা দেয় না। এতে আরো রেগে আছে শাহিন। আমি শুনেছি সেদিন শাহিন রিমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল ওর সাথে। মানুষজন জমা হয়ে যাচ্ছিল তাই পারেনি। নিয়ে গেলে অনেক বড় বিপদ হত।

আমি বুঝতে পারলাম যতটা সহজ ভেবেছি হয়তো এত সহজ হবে না। আর শাহিনকে যতটা খারাপ ভেবেছি; তারচেয়ে জঘন্য ছেলে সে। ওর মতো ছেলেকে শুধু কিছুটা শাসিয়ে দিলেই থামবে না। আর ওর অপরাধ অনেক বড়। থানায় জানতেই হবে বিষয়টা। যদি গ্রামের বিচারে শাহিনকে ক্ষমা করে তাহলে খুব খারাপ হবে রিমার জন্য।

আমি বাবুকে বললাম, তোর কোনো সমস্যা হবে না। তবে কাল সত্য বলতে পারবি তো? আর যদি না পরিস তো মনে রাখিস তোর মতো ছেলের লেখাপড়া করে কোনো লাভ নেই। যে কিনা সত্য মিথ্যা বা ন্যায় অন্যায় বুঝতে পারে না। বাবুকে চলে যেতে বললাম। ও দাঁড়িয়ে থাকল। আমি আবারও বললাম, ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চলে যা সামনে থেকে। ছোট থেকে তোদেরকে বড় হতে দেখলাম। জানতাম তোরা সত্যি অনেক ভালো আর সাহসী। জানতাম না এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন তোরা।

বাবু এবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, কাল আর কেউ কিছু না বললেও আমি সত্য বলতে আসবো। যে যাই বলুক। আর রোমান নামের একটা ছেলে শাহিনের বন্ধু। ওর সাথে সবসময়ই থাকে। আমাকে ওই সব কথা বলেছে। ওর সাথে তুমি দেখা করলেই সব জানতে পারবে। আমি বললাম মোবাইল নম্বর দে। বাবু বলল, মেবাইলে কথা বললে ও আর সামনে আসবে না। পালিয়ে যাবো ওকে আর পারে না। কাল ওকে সামনে আনলেই সহজেই সবকিছু প্রমাণ করতে পারবে। কোনো ভাবে যদি ওকে ফাঁদে ফেলে কথা বের করতে পারো। তাহলেই হয়ে গেল কাজ।

আমি বাবুর কাঁধে হাত রেখে বললাম, বাহ। তুই তো সিআইডি রে বাবু। এত বুদ্ধি তোর। দারুণ হলো এবার দুই জন মিলে এই কেসের সমাধান করবো চল। আমি বাবুকে নিয়ে রোমাদের বাড়িতে গেলাম। ওখানে গিয়ে রোমানকে পেলাম না। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রোমান বাড়িতে এলো। ও বাবুর সাথে আমাকে দেখেই পালাতে চাইল। আমি ওর হাত ধরে ফেললাম। ওকে শক্ত করে ধরে বললাম, পালাচ্ছিস কোথায়? যখন রাস্তা ঘাটে মেয়েদের জ্বালায় মজা করিস তখন ভয় থাকে না মনে? এবার শাহিনের সাথে তোর বিচার করবো। জেলে তুই সহ যাবে শাহিন। রোমান ভয়ে কেঁদে দিল।

রোমান বলল, আমি কিছু করি নাই। আমি শুধু শাহিনের সাথে থাকি। সাথে থাকলে কিছু টাকা দেয়। আমাদের অবস্থা ভালো না। কোথাও কাজ চেয়ে পাইনি। ওর সাথে থাকলে তিন বেলা খাবার পাই। বুঝতে পারলাম শাহিনের সাথে কত ছেলে এভাবে নষ্ট হচ্ছে অভাবের তাড়নায়। ওকে বললাম, তুই সেদিন শাহিনের সাথে ছিলি। কিছু না করলেও শাস্তি তোর হবেই। তোকে কেউ বের করবে না জেল থেকে। রোমান আমার পা ধরে কাঁদতে লাগল। আমি ওকে উঠিয়ে বললাম, এখন একটাই রাস্তা কাল বিচারে গিয়ে সত্য কথা বলবি। তা না হলে শাহিনের যা হবে তার থেকে খারাপ হবে তোর। আর যদি সত্যি সব বলিস। আমি কথা দিলাম তোর কিছু হবে না।
 
রোমান বলল, আমি শাহিনের সামনে গিয়ে ওর নামে সব সত্যি কথা বললে। ওখানেই শেষ করে দিবে আমাকে। আমি বললাম, ওখানে আমি আর বাবু তো আছি। তোর গায়ে হাত দিবে এত বড় সাহস কার হবে বল? তাছাড়া আমি থানার ওসিকে সব বলে রাখব। কোন চিন্তা করিস না। 

রোমান বলল, শাহিন রিমা ছাড়াও রাস্তায় অন্য মেয়েদেরকেও বিরক্ত করে। বাজে কথা বলে পাশ দিয়ে যাওয়ার সমায়। ওর বাবার ক্ষমতার জন্য কেউ কিছু বলে না। রোমানকে বললাম, আর যদি চালাকি করিস তো তোর সব কথা এখন রেকর্ড করেছি। তুমি অবশ্যই বিপদে পড়বি। রোমান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কাল সত্য বলবো। আমাকে বিশ্বাস করেন। তবে শাহিন চলে গেলে আমাকে একটা কাজ কী সত্যি দিবেন ভাই? আমি রোমানকে কথা দিয়ে এলাম ওর কাজ হবেই।

বাবুকে বাড়ি যেতে বলে আমি থানায় গেলাম ওসির সাথে কথা বলার জন্য। যেয়ে শুনি আগের ওসি এখন নেই বদলি হয়ে গেছে। ওনাকে চিনতাম আমি, চাইলে সাহায্য করত। এখন কী হবে? থানায় ওসি নেই বাহিরে গেছেন তাই অপেক্ষা করছি। তারপর ওসি সাহেব এলেন থানায়। ওসিকে দেখে তো আমি অবাক। আমার বন্ধু কামাল নতুন ওসি হয়ে এসেছে। অনেক দিন ওর সাথে যোগাযোগ নেই। আমাকে দেখে ও খুব অবাক হলো। মনে মনে ভাবলাম যাক কপাল ভালো। ওকে সব খুলে বললাম। ও বলল, তাহলে সরাসরি শাহিনকে গ্রেফতার করে আনি। আমি বললাম, না কাল ওকে ওখানে সবার সামনে দোষী প্রমাণ করে তারপর থানায় আনব। তুই শুধু সময় মতো কল দিলে কনস্টেবল পাঠিয়ে দিবি। আমি একটা জিডি করে রেখে যাচ্ছি। ও রাজি হলো।

বাড়িতে গিয়ে রিমার বাবাকে কল করে সব জানালাম। উনি অনেক বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। রাতটা খুব চিন্তায় কাটলো। বিকালে সবাই আসলো। শাহিনও এসেছে। আমি বাবু আর রোমানকে পরে আসতে বলেছি। ওদের ডাকলে তারপর আসতে বললাম। কলিকে তার বাবা নিয়ে এসেছে। শাহিন আর তার বাবা বারবার বলছে শাহিন সেদিন এখানে ছিল না। সে তার নানার বাড়িতে ছিল। এসবের কিছুই সে জানে না। আর রিমা বারবার বলছে শাহিন এসব করেছে। কলিও বলল, শাহিন খুব বিরক্ত করে রিমাকে।

বাধ্য হয়ে বাবু আর রোমানকে ডেকে আনলাম। শাহিন আর ওর বাবার মুখ শুকিয়ে যায় ওদের দেখে। শাহিন গজগজ করতে করতে রোমানকে বলল, তুই এখানে কী করিস? আমি শাহিনকে বললাম, একদম চুপ করে থাক। তোর যা বলার বলেছিস। এখন এদের কথা শুনি। বাবু আর রোমান সবার সামনে সবকিছু খুলে বলল। সবাই বুঝতে পারলো দোষ আসলে শাহিনের। এই দোষের ভাগিদার শাহিনের বাবাও। ছেলের সবকিছু জেনেও লুকিয়েছে সব। 

এবার আমি ওসিকে কল দিলাম। বাহিরে ছিল দুই জন কনস্টেবল। তারা নিয়ে গেল শাহিনকে। শাহিনের বাবা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে গেল, এর ফল ভালো হবে না। আমিও বলে দিলাম এবার এসবের ফল আপনারও খারাপ হবে। রিমা আর তার বাবা অনেক খুশি হলো আামর উপর। সবার সামনে বারবার আমার মাথায় হাত দিয়ে রিমার বাবা দোয়া দিচ্ছিলেন। এটা অনেক বড় পাওয়া জীবনের। 

বাবা আর চাচা বেশ অবাক হলো সবকিছু দেখে। বাবা জিজ্ঞেস করলো, তুমি তো এসব নিয়ে কখনো কথা বলো না। এবার সবকিছু একাই করলে। কেন করলে বলতে পারো? আমি বললাম, তেমন কিছু না।গতকাল রিমার বোন কল করেছিল আমাকে। ও আর আমি একই সাথে পড়েছি এখানে। রিমার কথা বলেছে আমাকে। আর আমি বলেছি যে, অন্যায় করেছে তার শাস্তি হবেই। তাছাড়া গ্রামের অবস্থা এমন খারাপ হোক তা আমি চাই না। গ্রামের প্রতি আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। একজনের শাস্তি হলে অন্যদের শিক্ষা হবে।

আমি বাবুকে আমার বাবার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পিয়নের চাকরি দিলাম। আর ওকে বললাম, ডিগ্রিতে ভর্তি হতে। আমি কলেজের স্যারকে বলে দিলাম। যা টাকা লাগে ভর্তি হতে আমি দিব। রোমান আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। বলল, ভাই সত্যি অনেক বড় উপকার করলেন। শুধু পেটের দায়ে এসব মানুষের সাথে চলতে হয় আমাদেরকে। 

আমি ঢাকায় ফিরে আসলাম। সত্যি এবার মনটা অনেক ভালো। মনে হচ্ছে এত বছর পর একটা ভালো কাজ করলাম। সমাজ সব সময় মেয়েদেরই দোষী বলে। অনেক সময় অন্যায়ের বিচার হয় না বলেই অপরাধীর সাহস বেড়ে যায়। ছোট অপরাধ থেকে অনেক বড় অপরাধ সৃষ্টি হয়। অপরাধের বিচার হওয়া জরুরি। দোষী যত ক্ষমতাবান হোক না কেন আইন সবার জন্য সমান। তবেই আইনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়বে। বিচার চেয়ে কেউ যেন বিচারের দরজায় অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে না থাকে নীরব দর্শক হয়ে। ধীরে ধীরে অসঙ্গতি যেন দূর হয় সমাজ থেকে। বিচারের কাঠগড়ায় অপরাধীর শাস্তি যেন হাজারো অপরাধ দমিয়ে দিতে পারে। বিনাশ হবে অপরাধীর। অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সকলের।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
অফিস সময়ে সভার জন্য সম্মানী না নিতে নির্দেশনা
জাতীয় সংসদে আসন ৬০০ করার সুপারিশ
এনসিপির জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়কের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৪০
বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সরফরাজের পদত্যাগ
সিরাজগঞ্জে চীন বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ছোট্ট পাঠক সাবিহা : পত্রিকা পড়া যার নেশা
ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা টানু মল্লিক গ্রেপ্তার
কোণঠাসা কোক-পেপসি, জায়গা নিচ্ছে দেশীয় পানীয়
টঙ্গীতে ভাই-বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft