প্রকাশ: বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৪:১২ PM আপডেট: ২৬.০২.২০২৫ ৬:১৭ PM

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সপ্তম মাসে এসে গতকাল মঙ্গলবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া বক্তব্য সারাদেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আমি সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করি এবং আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তার এই বক্তব্য আলোকবর্তিকা হিসেবে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহস জোগাবে। অনেকদিন পর একজন সাহসী সৈনিকের কণ্ঠে বজ্রদীপ্ত ও দিকনির্দেশনাময় বক্তব্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হবে- এটাই কাম্য। যে বক্তব্য সরকারের কাছ থেকে আসার কথা ছিল, সেটা একজন সৈনিকের মুখ থেকেই এসেছে। যে কোনো জাতির জন্য দেশের সশস্ত্রবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে হেয়প্রতিপন্ন করলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আসে। এই বাহিনী তথা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সম্পদ। এখানে কোনো ব্যক্তির অপকর্মের জন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হলে প্রতিষ্ঠানই দুর্বল হয়ে পড়ে। দোষী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সবার মতোই আমরাও শাস্তি চাই এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুনাম ও দক্ষতার সহিত পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করি।
ডিজিএফআই, এনএসআইসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। এর মধ্যে দুই-একটি কাজ বা তথ্য সঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের দেশপ্রেম প্রশ্নের অতীত।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার ঘটনায় সিআইএ অথবা এফবিআইয়ের মতো প্রচুর অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তেমনই ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলা বা ১৯৮৯ সালে চীনের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে ছাত্রবিপ্লব অথবা পূর্ব জার্মানির বার্লিনে দেয়াল ভাঙার তথ্য সেসব দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সঠিক সময়ে তাদের সরকারকে দিতে পারেনি। এসবের কারণ তো এই নয় যে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের জন্য সঠিক তথ্য সব সময় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শত শত সদস্য দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থে নীরবে-নিভৃতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু জীবন দিলেও কখনো বুক চিতিয়ে কৃতিত্বের দাবিদার হননি। পৃথিবীর যেকোনো সভ্য সমাজে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পুলিশের কিছু কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বটে। তারপরও তাদের প্রচেষ্টায় দেশের আইনশৃঙ্খলা যেভাবে রক্ষা করা হয়েছে, তাতে তাদের অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর অবদান মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে গর্বের ধন। এই দেশপ্রেম প্রতিটি নাগরিকের আত্মায় ধারণ করা উচিত। তাদের (সেনাবাহিনী) দলমত নির্বিশেষে সবার উপরে রাখাই সর্বোত্তম। ১৭ কোটি মানুষের এই প্রাণপ্রিয় দেশে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আসুন আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশেকে সুখী-সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলি। সবার আগে আমাদের দেশ ‘বাংলাদেশ’। এই হোক আমাদের লক্ষ্য ও কাম্য।
লেখক: সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, দৈনিক আজকালের খবর।
আজকালের খবর/আরইউ