বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলতো, এখন কেউ কেউ সে ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্যে ফ্যাসিবাদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি হারিয়ে গেলেও দেশের বিরুদ্ধে এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। ফ্যাসিবাদের পথে কেউ পা বাড়ালে তাদেরও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের কথা স্মরণ করা উচিত।
তিনি আজ শনিবার সকালে ফেনীর আল জামেয়াতুল ফালাহীয়া মাদরাসা মাঠে জেলা জামায়াতের এক ইউনিট সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জেলা আমীর মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সাবেক জেলা আমীর একেএম শামছুদ্দিন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট এএসএম কামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আবু ইউসুফ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলার অপর নায়েবে আমীর মাওলানা মাহমুদুল হক। প্রারম্ভে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য মাওলানা আলাউদ্দিন।
সম্মেলনে প্রায় আট হাজার পুরুষ ও নারী সভাপতি অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বারবার শাসক ও শাসনের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ঘুষ, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কবলে পড়ে দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। শাসক গোষ্ঠী হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ধনী দরিদ্রের বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি করে সামাজিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে দিনের ভোট রাতে করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ এক নিকৃষ্ট পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে জাতিসত্তার পরিচয় ভুলিয়ে দিতে মিথ্যা বানোয়াট ও কাল্পনিক ইতিহাস রচনা করে জাতির ভবিষ্যতের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, সর্বত্র বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে মানুষ মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। ৫ আগষ্ট তরুণ প্রজন্মের সাহসী ও ত্যাগী ভূমিকার কারণে দেশের মানুষ আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তা হারিয়ে যেতে দেয়া যাবেনা। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি, টাকা পাচার, গুম, খুন, উন্নয়নের নামে লুটপাট বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশের মানুষ আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের যেমন চায়না তেমনি নতুন কেউ ফ্যাসিবাদি কায়দায় দেশ পরিচালনায় আসুক তাও চায়না। দেশের মানুষ সত্যিকার একটি পরিবর্তন চায়; যেখানে তারা আত্মমর্যাদা, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করতে পারবে। জামায়াতে ইসলামী সে ধরনের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার কাজ অব্যাহত রেখেছে। তিনি দেশবাসীকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।
মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াতের থেকেও আওয়ামী জাহেলিয়াত আরও জঘন্য ছিল। আগষ্ট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি সেই ঘৃণ্য জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি লাভ করেছে। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগষ্ট বিপ্লবের সঠিক ইতিহাস যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো প্রতি বিপ্লব যেন এই বিপ্লবকে নস্যাত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এদেশে সবচেয়ে বেশী জুলুমের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। আমাদের প্রতিটি অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। পতনের পূর্বে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। আল্লাহ তাদেরকে চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ইসলামের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে না পারলে এদেশের মানুষকে আবারো জীবন ও রক্ত দিতে হবে। শান্তি আসবে না। শান্তির জন্য ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এক টাকাও দুর্নীতি হবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সত্যিকার অর্থে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
আজকালের খবর/ওআর