ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার ৭০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়েই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমা মাঠ এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য শুক্রবার বিকেল থেকে মাইকিং শুরু হয়। বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তাসহ তাদের ইজতেমা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি যারা আছেন তারাই করে থাকেন। তবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে থাকি। এক সময় তারা নিজেরাই সবকিছু করতেন। ইজতেমার পরিধি বাড়ার কারণে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এটা সাধারণত ইজতেমার মুরুব্বি যারা আছেন, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী সহযোগিতা করে থাকি।
তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন তাবলীগ জামায়াতের ইজতেমাকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম জামাত বলা হয়ে থাকে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মুসল্লি এখানে উপস্থিত হয়। এজন্য তাদের কিছু মৌলিক চাহিদা রয়েছে। টয়লেট, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ,খাবার পানি,ছাউনির জন্যে চট, এইসব বিষয়গুলোতে আমরা তাদেরকে সাপোর্ট দিয়ে থাকি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর একটা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একটা বড় দায়িত্ব রয়েছে। এছাড়া পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ইজতেমা কর্তৃপক্ষের ডিমান্ড ছিল চটের পরিবর্তে টিনের। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ইজতেমায় যাতে মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে আসতে ও এজতেমার শেষে যেতে পারে সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়াও প্রশাসক সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ঠ সকলকে যথাসময়ে সকল কাজকর্ম সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেন।
বিশ্ব ইজতেমার বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এই বিষয়টি জাতীয় বিষয়। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। এ সময় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শফিউল আজম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরিফিন ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাগণ, পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও তাবলীগের শীর্ষ মুরব্বিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, এ বছর প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমে পর্বে শুরায়ে নেজামের অনুসারীগণ ইজতেমার আয়োজন করবেন। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া কথা রয়েছে। কিন্তু, দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ে বিষয়ে শুরায়ে নেজামের অনুসারীরা আপত্তি করার পর সরকার এখনো স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে গত ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়। পরে সাদপন্থিরা ২০ ডিসেম্বর তাদের অংশের জোড় ইজতেমা করতে চাইলে অপরপক্ষ আপত্তি করলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর সাদপন্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর রাতেই ঘটে যায় অপ্রীতিকর ঘটনা।
বর্তমানে সাদপন্থীরা দ্বিতীয় পর্ব করবেন বলে জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। আর শুরায়ে নেজাম সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ করতে আন্দোলন করছেন। তারা নিষিদ্ধ হলে ইজতেমা করতে পারবে না বলে শুরায়ে নেজামের দাবি।
আজকালের খবর/বিএস