মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদের মোহনায় আটক পণ্যবাহী তিনটি কার্গো এখনও ছেড়ে দেয়নি দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এসব কার্গোতে ৫০ হাজার বস্তা শুঁটকি, সুপারি, কফিসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় পর্যন্ত আটক কার্গো বোট তিনটি ছাড়ার খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে পণ্যবাহী নৌযান তিনটি আটকে দেয় আরাকান আর্মি।
এসব তথ্য জানিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এখনও মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী কার্গো বোটগুলো ছেড়ে দেয়নি আরাকান আর্মি। বৃহস্পতিবার দুপুরে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদের মোহনায় তল্লাশির কথা বলে তিনটি কার্গো আটকে রেখেছে তারা।’
জানা গেছে, মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় তারা। এরপর থেকে কোনও পণ্যবাহী জাহাজ মিয়ানমার থেকে টেকনাফে আসেনি। সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন থেকে গত ৩ ডিসেম্বর টেকনাফে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল।
এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাবে টেকনাফ স্থলবন্দর অচল হয়ে পড়ে আছে বলে জানালেন বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা জানিয়েছেন, এক মাসের বেশি সময় পর ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্যবাহী তিনটি কার্গো টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নাফ নদের মোহনায় সেদেশের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে তিনটি কার্গো আটকে দেয় আরাকান আর্মি। আটকে রাখা তিনটি কার্গোতে ৫০ হাজারের বেশি বস্তায় আচার, শুঁটকি ও সুপারিসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও বোটগুলো ছেড়ে দেয়নি তারা। এসব পণ্যের আমদানিকারক শওকত আলী, ওমর ফারুক, মো. আয়াস, এম এ হাসেম, মো. ওমর ওয়াহিদসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফ স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী নৌযান আসা বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুন থেকে আসার পথে তিনটি কার্গো আটকে রেখেছে তারা। এখনও বোটগুলো তাদের হেফাজতে রয়েছে।’
স্থলবন্দরের এক আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রায় দেড় মাস পর ইয়াঙ্গুন থেকে আমরা কয়েকজন পণ্য আমদানি করেছি। সেগুলো আসার পথে আটকে দিয়েছে আরাকান আর্মি। এখনও পণ্যবাহী কার্গো তিনটি তাদের হেফাজতে। সেগুলোতে আচার, শুঁটকি ও সুপারিসহ বিভিন্ন পণ্যভর্তি ৫০ হাজার বস্তা আছে। এ ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে বন্দরের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এতে সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত সীমান্ত বাণিজ্য সচল করতে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলে একটি সমাধানের পথ বের করা। না হলে ব্যবসায়ীরা টেকনাফ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।’
টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে তিনটি পণ্যবাহী কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরে আসছিল। পথে নাফ নদের মাঝপথে বোটগুলো তল্লাশির কথা বলে আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এখনও বোটগুলো ছেড়ে দেয়নি।’
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে মিয়ানমারের জলসীমায় পণ্যবাহী কার্গো বোটে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ এখনও আমাদের কিছুই জানায়নি। তা ছাড়া এটি আমাদের জলসীমানার বাইরে।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমার জলসীমানা থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো আটকের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট কেউ অবহিত করেনি। তবে বিষয়টি আমার কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছি।’
আজকালের খবর/ এমকে