চীনের জনসংখ্যা ২০২৪ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো কমেছে। পূর্ব এশিয়ার এই পরাশক্তি এখন ক্রমবর্ধমান জনমিতি সংকটের মুখে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানায়, গত ১২ মাসে দেশটির জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৯০ হাজার কমে ১৪০ কোটি ৮০ লাখে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর হার জন্মহারকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় এই হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
চীনের জনসংখ্যা ১৯৮০ এর দশক থেকেই ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। তবে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মৃত্যুহার জন্মহারকে ছাড়িয়ে যায়। এর আগে ১৯৬১ সালে, ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ২ কোটি মানুষের মৃত্যুর সময় এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল।
জন্মহার বাড়াতে বেইজিংয়ের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদি এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়নি। এনবিএস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বহিরাগত পরিবেশের বিরূপ প্রভাব বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম, কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও পরিচালনায় সমস্যার মুখোমুখি এবং অর্থনীতি এখনও চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।
জন্মহার বাড়াতে বেইজিং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। একদিকে অবিবাহিত নারীদের ‘অবশিষ্ট’ আখ্যা দিয়ে বিয়ে প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে বিবাহবিচ্ছেদ ও গর্ভপাতের প্রক্রিয়া কঠোর করা হয়েছে। পাশাপাশি শিশু লালন-পালনের ব্যয় মেটাতে দম্পতিদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালে কোভিড-১৯ মহামারির অবসানের পর বিয়ের হার বছরে ১২.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে কিছু এলাকায় জন্মহার সামান্য বাড়িয়েছিল।
২০২৪ সালটি চীনে ‘ড্রাগনের বছর’ ছিল, যা ঐতিহ্যগতভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মহার সামান্য বৃদ্ধির জন্য পরিচিত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিক প্রবণতা নিম্নগামী।
২০১৬ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ‘এক সন্তান নীতি’ বাতিল করে। এই নীতিটি দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ছিল, তবে এর ফলে পুরুষ সন্তানদের প্রতি সাংস্কৃতিক পক্ষপাতের কারণে জনসংখ্যায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
২০২১ সালে তিনটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও নগর জীবনের উচ্চ ব্যয়, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং যুব বেকারত্বের উচ্চ হার নতুন প্রজন্মকে সন্তান ধারণে নিরুৎসাহিত করছে।
২০২৪ সালে চীনের অর্থনীতি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরকারি পূর্বাভাস পূরণ করলেও আগামী বছরগুলোতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও ধীর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনমিতি সংকট মোকাবিলায় চীন অবসর গ্রহণের বাধ্যতামূলক বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পুরুষদের জন্য বয়স ৬০ থেকে ৬৩ এবং নারীদের জন্য বিভিন্ন পেশায় ৫৫ থেকে ৫৮ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
চীন একমাত্র দেশ নয়, যে জনমিতি সংকটে ভুগছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানও একই কারণে জনসংখ্যা হ্রাসের সম্মুখীন। অভিবাসন সীমাবদ্ধতা এবং অবিবাহিত নারীদের জন্য আইভিএফের মতো চিকিৎসা সুবিধা নিষিদ্ধ থাকাও এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আজকালের খবর/ওআর