প্রকাশ্যে দুর্নীতি হলেও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ ছাড়া কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না এমনই প্রশ্ন তুলেছেন সুধী সমাজ। ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞাসা ভূমি অফিসের দুর্নীতি থেকে কী কোনদিন মুক্তি পাব না আমরা?
ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া হয় না কোনো কাজ এ কথাটির যেন জ্বলন্ত উদাহরণ মাদারীপুর জেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো। জমির নামজারি, ভূমি করসহ জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ এখন অনলাইনে করার নিয়ম থাকলেও গ্রামের সহজ সরল মানুষ এখনো ভূমি অফিসেই যায়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদাররা। কেউ অনলাইনে আবেদন করলেও টাকা ছাড়া মেলে না প্রতিবেদন। প্রতিটি নামজারির প্রতিবেদনের জন্য ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়। কাগজপত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তো কোনো কথাই নেই। মোটা টাকা দিলেই হয়ে যায় সব সমাধান।
কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিওন আবু আলম। এই অফিসে কাজ করে হয়েছেন অনেক টাকার মালিক। গড়েছেন বিপুল সম্পদ। সন্তানদের পড়াচ্ছেন ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অবৈধ টাকার গরমে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন এই পিওন। কালিকাপুর ভূমি অফিসে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হয়। নিজের ক্ষমতা জাহির করতে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি।
একই অফিসের তহসিলদার জাহাঙ্গির আলম। তিনি টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না এটা এলাকার সবাই জানে। ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তিনি। জেলা শহরের দরগাখোলা এলাকায় কোটি টাকার উপরে খরচ করে তিন তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। টাকা ছাড়া কাজ করেন না কেন প্রশ্ন করলে তিনি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে। এছাড়া বাড়ি বা সম্পদের কথা জানতে চাইলে কোােন কথা বলতে রাজি হয়নি তহসিলদার জাহাঙ্গির আলম।
মস্তফাপুর ভূমি অফিসেরও একই অবস্থা। তহসিলদার আলেয়া বেগম নিজ হাতেই করেন অবৈধ এসব লেনদেন। মস্তাপুর এলাকায় বাড়ি করে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলেও সাধারণ মানুষকে দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেন তিনি।
মোশারেফ হাওলাদার বলেন, ভূমি অফিসের কেউ টাকা ছাড়া কাজ করে না। জমির মিউটেশন করতে গেলে সব কাগজ ঠিক থাকলেও টাকা না দিলে কোনো কাজ করে না। বারবার অফিসে গেলেও দেখতেছি দেখব বলে ঘুড়ায়। টাকা দিলেই কাজ শুরু হয়। টাকা না দিলে সব কাগজ ঠিক থাকলেও কোনো অজুহাত দেখিয়ে আবেদন বাতিল করে দেয়।
এছাড়া একাধিক ভুক্তভোগী জানান, সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না ভূমি অফিসে। কাগজে একটু ভুল থাকলে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া কোনো তদন্ত করলে টাকা ছাড়া রিপোর্ট দেয় না। যে বেশি টাকা দেয় তার পক্ষে রিপোর্ট দেয় তারা। অভিযোগ করেন না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের জমি জমা আছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমাদের জমি জমায় সমস্যা তৈরি করবে। তারা টাকা নেয় তা সবাই জানে। বড় স্যারেরা কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না?
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি খান মো. শহীদ বলেন, ভূমি অফিসগুলোতে সচরাচর দুর্নীতি হয় বলে শোনা যায়। কেউ অভিযোগ না করলেও চাইলেই প্রশাসন যথাযথভাবে নজরদারী করে দুর্নীতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের স্বদিচ্ছাই ভূমি অফিসগুলোকে দুর্নীতি মুক্ত করতে পারে।
জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজমুল ইসলাম বলেন, কোনো অনিয়মের পক্ষে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে না। যদি কোনো অভিযোগ পাই তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
আজকালের খবর/ওআর