সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে বাম চোখে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া দেড় বছর বয়সী এক শিশুর ডান চোখে অপারেশনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ভুল চিকিৎসার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরও গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত চিকিৎসক শাহেদ আরা বেগম। তবে, পাঁচ হাজার টাকা বন্ডের মাধ্যমে দিনের মধ্যেই জামিন পেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা রহমান শুনানি শেষে ডা. শাহেদ আরা বেগমের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই চিকিৎসককে কারাগারে রাখার আবেদন করেন।
এদিন শুনানিতে আসামিপক্ষের অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ বলেন, ৩৫ বছরের ডাক্তারি জীবন তার। তিনি একজন সিনিয়র ডাক্তার। তার বিরুদ্ধে বামের বদলে ডান চোখে চিকিৎসা করার অভিযোগ। আসলে শিশুটির চোখে পাপড়ি ঢুকে গিয়েছিল। সেটি সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে দেখা যায়, বাম চোখেও একই অবস্থা। মারাত্মক সিরিয়াস কিছু না। জামিনযোগ্য ধারা। গুরুতর অভিযোগ নাই। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ডা. শাহেদ আরা বেগমকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী স্বজনদের অভিযোগ ছিল, গত মঙ্গলবার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা দেড় বছরের বাচ্চার চোখের সমস্যা নিয়ে যান ধানমন্ডির বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে। বাম চোখের মধ্যে ময়লা জাতীয় কোনো একটি জিনিসের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। পরে অপারেশনের জন্য শিশুটিকে এনেসথেসিয়া দিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাম চোখের জায়গায় অপারেশন করা হয়েছে ডান চোখে।
তবে, ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে এ ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, যেখানে দাবি করা হয়েছে রোগীর মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজন চিকিৎসা প্রক্রিয়ার পুরো অংশটি বুঝতে ভুল করেছেন।
বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট এর পক্ষে চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী মেজবাহ উল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট এ রোগীর শিশুর ভুল চোখে অস্ত্রোপচার ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন ভিত্তিহীন ও প্রকৃত ঘটনাকে সম্পূর্ণ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গণমাধ্যমে এটি অস্ত্রোপচার বলে খবর প্রচার করা হলেও মূলত, শিশুটির চোখের পাতার নিচের পাপড়ি সরানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের নির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ১৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টায় একটি বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে শিশুটির চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারেন, ১৪ জানুয়ারি ইরতিজা আরিজ হাসান নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশু রোগীকে চোখের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে শিশু চক্ষু বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাহেদ-আরা বেগমের কাছে আনা হয়। তিনি শিশুর চোখের পাতার নিচে ফরেন বডি (চোখের পাপড়ি) অস্তিত্ব খুঁজে পান, যা শিশুটির চোখের কর্ণিয়ার ক্ষতির কারণ হতে পারতো। তাই তিনি তা বের করে আনার পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চিকিৎসাটি কোনো অস্ত্রোপচার ছিল না। ছোট শিশু বিধায় সামান্য ঘুমের ওষুধ দিয়ে চোখের পাতার নীচ থেকে ফরেন বডি সরানো হয়েছে। চোখের উপরিভাগের ঘর্ষণজনিত সমস্যা (Corneal Abrasion) হতে দ্রুত নিরাময়ের জন্য ওই শিশুটির চোখ ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়। এটি এ ধরনের চিকিৎসার স্বীকৃত ও প্রচলিত পদ্ধতি। পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থা যথাযথ অনুসরণ করা হলে শিশুটির চোখের কোনো দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী সমস্যা হবে না।
আজকালের খবর/ওআর