প্রকাশ: রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:৪২ PM আপডেট: ১২.০১.২০২৫ ৫:২০ PM
নেত্রকোনার পূর্বধলায় ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তিনজনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে জহিরুল (২২) ও মাফিয়া আক্তার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অন্যদিকে ট্রাকের চাপায় ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুর থেকে আজ ররিবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে। ৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ।
তিনি জানান, উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নে জহিরুল ও আগিয়া ইউনিয়নের হাটকান্দা পশ্চিমপাড়া গ্রামের লড়ি ট্রাক চালক দ্বীন ইসলামের স্ত্রী মাফিয়া আক্তারের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় পূর্বধলা থানায় দু’টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদরের নসীবপুর গ্রামের ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) এবং তার মেয়ে ফাতিন (২০) ঘটনাস্থলে মারাত্বকভাবে আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) মারা যায়। ফেরদৌস আহম্মেদের লাশ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার দুপুরে পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নে জহিরুল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জহিরুল নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করত। দুপুরের দিকে তার দাদির কাছে টাকা চাইলে দাদি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিম বাড়ির সামনে রাখা সিমেন্টের একটি খুঁটি বিক্রি করে দেয়। খুঁটি বিক্রির জন্য তার নানা আজিজুল এসে গালাগালি করলে জহিরুল রাগে দরজা বন্ধ করে রাখে। দাদী হালিমা খাতুন দুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে ডাকাডাকির এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে দেখে জহিরুল ঘরের বাশের আড়ার সঙ্গে লাল ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে গতকাল দিবাগত রাত ৩টার উপজেলা সদরের ইউনিয়নের নসীবপুরে দারুল উলুম নোমানিয়া নও-মুসলিম মাদরাসার সামনের সড়কে নেএকোনা থেকে পূর্বধলাগামী বালুর ট্রাক (চট্রঃ মেট্রো-১১-৫২৫৬) পিছন দিক থেকে বেপরোয়াভাবে মটরসাইকেলে (নেএকোনা- হ-১২-০৪৫৯) ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলে থাকা ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) এবং তার মেয়ে ফাতিন (২০) ঘটনাস্থলে মারাত্বকভাবে আহত হয়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা বাবা ও মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ফেরদৌস আহমেদকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোররাতে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মেয়ে ফাতিন (২০) বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফেরদৌস আহমেদের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে বালুর ট্রাক এবং ড্রাইভারকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
অপরদিকে উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের হাটকান্দা পশ্চিমপাড়া গ্রামের লড়ি ট্রাক চালক দ্বীন ইসলামের স্ত্রী মাফিয়া আক্তার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। জানা গেছে, ২ বছর আগে বিবাহে আবদ্ধ হন মাফিয়া ও দ্বীন ইসলাম। বিয়ের ১ম বছরের মাথায় মৃত ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এবার আবারও তিন মাস অন্তসত্ত্বা ছিলো মাফিয়া। স্বামী দ্বীন ইসলামের সঙ্গে মাফিয়ার পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। গতরাতে স্বামী লড়ি ট্রাক চালিয়ে রাত ৩ টার সময় বাড়িতে এসে ঘরের দরজা ধাক্কা দেয় এবং ডাকাডাকি করলে সাড়া না দিলে দরজার সঙ্গে রশির বাঁধন কেটে ঘরে ঢুকে দেখে ধরনার সাথে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে স্ত্রী মাফিয়া। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত মাফিয়ার বাবা উপজেলার মেঘশিমুল গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান, দুই বছর আগে আমার মেয়ে মাফিয়া আক্তারের সঙ্গে দ্বীন ইসলাম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই দ্বীন ইসলাম বিভিন্ন দাবি দাওয়া করে। আমি গরীব মানুষ টাকা পয়সা না দিতে পারার কারণে মেয়েকে আমার বাড়িতে আসতে দিতো না। মেয়েকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতো। যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। এ ব্যাপারে আমি থানায় মামলা করবো।
আজকালের খবর/ওআর