বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে যেসব দালাল প্রকাশক প্যাভিলিয়ন পেয়েছেন, সাধারণ প্রকাশক ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটি ২০২৫-এর প্রকাশক প্রতিনিধিদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এবারও তাদের প্যাভিলিয়ন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এসব প্রকাশক কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, নানা রকম ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা, অর্থবিত্ত, বৈভব হাতিয়ে রাতারাতি তথাকথিত বড় প্রকাশক বনে গেছেন।
আজ বুধবার অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর পরিচালনা কমিটির সভায় প্রকাশক প্রতিনিধি এবং লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ছাত্র জনতার আন্দোলনবিরোধী প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের প্রতিবাদ করলেও বাংলা একাডেমি তা মানতে অনীহা প্রকাশ করলে বিষয়টি অমীমাংসিত থেকেই সভার সমাপ্তি হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের পক্ষ থেকে দালাল প্রকাশক সিন্ডিকেটের ২০ জন প্রকাশক যারা সরাসরি ছাত্র জনতার আন্দোলনে বিরোধিতা করেছেন তাদের প্যাভিলিয়ন বাতিলের দাবি জানান। দালাল প্রকাশকদেরকে প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার দাবিতে বাংলা একাডেমিতে প্রতীকী অনশনও করা হয়।
সভায় উপস্থিত বাংলা একাডেমির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার বদল হলেও বাংলা একাডেমির গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা রয়েছেন তাদের ৯০ ভাগ আওয়ামী আমলের সেটআপ। আর এই কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী প্রকাশকদের রয়েছে গোপন আঁতাত। তারাই দল ভারী করার জন্য দালাল প্রকাশকদের পক্ষের কয়েকজন প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন। ওইসব প্রকাশক প্রতিনিধিও আওয়ামী আমলে নামে-বেনামে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী প্রকাশকরা প্রতিবাদ করলেও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা চান আগের নিয়মেই মেলা চলুক।
বইমেলা কমিটির সদস্য একজন বিশিষ্ট লেখক বাংলা একাডেমিকে দলমত ও বিতর্কের উর্ধে রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, সকল প্রকাশকদের নিয়েই মেলা করা উচিত। কেউ যেন বঞ্চিত না হন।
বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও প্রকাশক প্রতিনিধি সাঈদ বারী বলেন, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। আমরা সেই সব প্রতিষ্ঠানকে প্যাভিলিয়ন না দিতে বলেছি।
বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও প্রকাশক প্রতিনিধি মো গফুর হোসেন বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২৪-এ হঠাৎ করেই একটি প্রকাশক গ্রুপ নিজেদের মহা এ্যারিস্টোকেট দাবি করে সাধারণ প্রকাশকদের ঠকিয়ে প্যাভিলিয়ন নিতে শুরু করে। আমরা এসব লুটেরা প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন সানু বলেন, আওয়ামী লীগের দালাল প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হলে তা সাধারণ প্রকাশকরা প্রতিহত করবেন। সাধারণ প্রকাশকরা চান না দালাল প্রকাশকরা বইমেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাক।
বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান বলেন, বৈষম্যবিরোধী সংগঠনসহ তিনটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রকাশক প্রতিনিধিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থানকারী প্রকাশকদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবেন না। প্রকাশকরা ওই সকল ফ্যাসিস্ট দালাল প্রকাশকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যারা দালাল প্রকাশকদের পক্ষ নেবেন তাদেরকেও বয়কট করা হবে।
আজকালের খবর/ওআর