গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো মেটা-নিয়ন্ত্রিত প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিবিসির গবেষণায় উঠে এসেছে, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদ প্রচারের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করা হয়েছে। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে ফেসবুকে তাদের পোস্টের দর্শক ও এনগেজমেন্ট আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
গাজায় এই যুদ্ধের ফলে মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র এখন সুস্পষ্ট। গত এক বছরে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন এক লাখ ছয় হাজার ৯৬২ জন। ইসরায়েলের লাগাতার হামলা এবং আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি উপেক্ষা করে গাজায় মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর আরও সংকুচিত করে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাজা এবং পশ্চিম তীরে প্যালেস্টাইন টিভি, ওয়াফা নিউজ এজেন্সি, এবং ওয়াতান নিউজের মতো ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের পোস্টে ৭৭% এনগেজমেন্ট হ্রাসের মুখে পড়েছে। প্যালেস্টাইন টিভি, যাদের ফেসবুকে ৫.৮ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে জানায়, তাদের পোস্টের দর্শকসংখ্যা ৬০% কমে গেছে।
প্যালেস্টাইন টিভির সাংবাদিক তারিক জিয়াদ জানান, আমাদের পোস্টগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এটি আমাদের সাংবাদিকতার জন্য একটি বড় বাধা।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর ফেসবুক এনগেজমেন্ট প্রায় ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়েডিয়ট আহরোনট এবং ইসরায়েল হাইওমের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো যুদ্ধ-সম্পর্কিত পোস্টে বড় পরিমাণ দর্শক টেনেছে।
মেটা দাবি করেছে যে তারা নির্দিষ্ট কোনো কণ্ঠস্বর দমন করেনি। তাদের সাময়িক নীতিমালা প্রয়োগের ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মেটার মুখপাত্র বলেন, আমরা ভুল করতে পারি, তবে কোনো নির্দিষ্ট কণ্ঠস্বর দমন করার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তবে, মেটার অভ্যন্তরীণ নথি থেকে জানা গেছে যে ইনস্টাগ্রামের অ্যালগরিদম পরিবর্তন করে ফিলিস্তিনি মন্তব্যগুলো আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। যদিও এই নীতিমালা পরে বাতিল করা হয়েছে, তবুও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের জন্য কাজ করা এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। অন্তত ১৩৭ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তবুও কিছু সাংবাদিক তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজার উত্তরাঞ্চলে কর্মরত ফটোসাংবাদিক ওমর আল-কাত্তা জানান, অনেক তথ্য আমরা প্রকাশ করতে পারি না। কারণ, বিষয়গুলো অনেক বেশি গ্রাফিক এবং সেন্সরশিপের শিকার হয়। তবুও ওমর এবং তার সহকর্মীরা জানাচ্ছেন যে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন।
ইসরায়েলের হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, এবং বসতবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজায় অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠী চিকিৎসা, খাদ্য এবং পানির সংকটে দিন পার করছে। এই অবস্থায় ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর কণ্ঠস্বর আরও সংকুচিত হওয়া গাজার মানবিক সংকটের গভীরতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে।
আজকালের খবর/ এমকে