শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯:৩২ AM
শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে। বাজারে শাকসবজির পর্যাপ্ত সরবরাহও আছে। তবে বাজার তদারকিতে দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর শঙ্কার জায়গায় পৌঁছে গেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফলতার মুখ দেখলেও, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম।মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ সালের নভেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১১৩ টাকা ৩৮ পয়সায়। 

একইভাবে খাদ্য ও খাদ্যবহিভর্‚ত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সংজ্ঞায়িত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত নভেম্বর মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকে (সিপিআই) এসব তথ্য উঠে এসেছে।মূল্যস্ফীতির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। কভিড পরিস্থিতির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও চরম চাপের মুখে পড়ে। শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে সে দেশের সরকার প্রধানকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। পরে ধাপে ধাপে নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশটির মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২ দশমিক ১ শতাংশ, আগের মাস অক্টোবরেও যা ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ছিল পাকিস্তানের অর্থনীতি। রাজনৈতিক নানা টানাপড়েনের মধ্যে দেশটির মূল্যস্ফীতিও প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। কিন্তু গত নভেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে, অক্টোবরেও দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ভারতকেও ২০২২ সালের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু তারাও নিয়ন্ত্রণে এনেছে। গত অক্টোবরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশের তুলনায় যা কিছুটা বেশি।

এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ভুটানের মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মালদ্বীপে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশে। আফগানিস্তানের সর্বশেষ আগস্টের মূল্যস্ফীতির তথ্য রয়েছে। সেটি ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিবিএসের সিপিআই তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি নাগালের বাইরে গিয়ে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। 

বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নানা চেষ্টা করছে। তারপরও নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থাকছে। চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইতিমধ্যে কয়েকবার নীতি সুদহারও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না গড় মূল্যস্ফীতি।

সিপিআই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের গড় মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের মাসেও ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সদ্য শেষ হওয়া মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে ঠেকেছে, অক্টোবরেও যা ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খাদ্যবহিভর্‚ত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে ঠেকেছে। আগের মাস অক্টোবরে এ খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গ্রাম ও শহর এলাকার বিবেচনায় শহরের তুলনায় গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলেও নভেম্বরে এসে এ চিত্র পাল্টে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

নভেম্বরে গ্রাম এলাকার গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশে, শহর এলাকায় তা আছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে গ্রাম এলাকায় ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশে, যেখানে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে।

এদিকে মূল্যস্ফীতি আগামী জুন মাসের মধ্যে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি পরবর্তী অর্থবছরে তা ৫ শতাংশে নামবে। আমাদের মূল লক্ষ্য ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আশা করি তা সম্ভব।’ গত বুধবার বিআইবিএমের এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে সুদের হার কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে গভর্নর আরও বলেন, ‘বন্যার কারণে বর্তমান বাজারে সবজি ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তি। একসময় তা কমে আসবে। মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে আমরা ব্যাংকের সুদ ও নীতি সুদহার কমিয়ে আনব।’

বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এ প্রশ্ন বারবার তুলেছেন তারা।

দেশের প্রায় সব অর্থনীতিবিদ বলেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে বাস্তবে তা আরও বেশি। বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের জিনিসপত্রের দামের বাস্তব প্রতিফলন নেই।

একই কথা বলেছে দেশের অর্থনীতির হালচাল জানার জন্য গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটির হিসাবে দেশে প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার এখন ১৫ থেকে ১৭ শতাংশের মধ্যে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক ও খসড়া হিসাবের ভিত্তিতে তারা এ পরিসংখ্যান দিয়েছে।

এ পদ্ধতিতে শ্বেতপত্র কমিটির হিসাব, চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৫ শতাংশ, মে মাসে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ, জুনে ১৫ শতাংশ, জুলাইয়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, আগস্টে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ও সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে দরিদ্র মানুষের জীবনে এর চরম প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।

মজুরি সূচক ৮.১০ শতাংশ : মানুষের আয় বেশি বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তা কিনতে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু দেশে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম। 

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে জাতীয় মজুরি হার ছিল ৮ দশমিক ১০ শতাংশ, এর মানে মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, মজুরি সেই হারে বাড়েনি। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর হিসাব করে থাকে বিবিএস।

মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। দেশে এরকম কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, গত দুই বছর ধরে মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক শূন্য তিন শতাংশে ওঠে।এভাবে প্রতি মাসেই অল্প অল্প করে বেড়ে ২০২৪ সালের অক্টোবরে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে ৮ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ হয়। নভেম্বরে আরও কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে।

আজকালের খবর/ এমকে








সর্বশেষ সংবাদ
যে খাবার শরীরের ক্ষতি ডেকে আনে
শীত আরও বাড়বে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর
ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা পাবেন সম্মানী ভাতা, কে কত?
বই থেকে 'আদিবাসী' গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় টিআইবির উদ্বেগ
পঞ্চগড়ে শৈত্যপ্রবাহ কাটলেও কমছে না শীতের দাপট
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
অপহরণ বাণিজ্য বন্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান চান টেকনাফের মানুষ
মাহফিলে সুদের বিরুদ্ধে কথা বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়মী লীগের জয়জয়কার
গাজীপুরে শ্রমিক নেতা আব্দুল হামিদের দাফন সম্পন্ন
জাবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ-কৌশিকসহ ছয় নেতা বহিষ্কার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft