টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ লোক এখন পানিবন্দি। এসব এলাকার প্রধান নদীসমূহের পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আজ অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ রোববার বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল থেকেই এসব অঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে। আজ বন্যা আক্রান্ত কুমিল্লা এবং ফেনী অঞ্চলেও বৃষ্টি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানীতেও আকাশ মেঘলা। গত রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানীতে আজ আরও বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামীকাল সোমবার থেকে বৃষ্টির প্রবণতা দেশজুড়ে কমে আসতে পারে।
আজ রোববার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি। এ অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১২ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক সপ্তাহ আগে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রভাবে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। তবে তিন দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়িসহ দক্ষিণ–পূর্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। গত পরশু থেকে সিলেট অঞ্চলেও বৃষ্টি শুরু হয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয় ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল।
এতে চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারে বন্যা হয়। পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছে ৪৫ লাখ মানুষ। আর এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বন্যাকবলিত এসব এলাকায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের ঠিকানা হয়েছে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরে। বিভিন্ন স্কুলের ছোট ছোট কামড়ায় জবুথবু হয়ে রয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষ, শিশু ও তরুণ। দুর্গত এলাকায় বুধবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই; নেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় দুর্গম এলাকায় বাসিন্দারা কেমন আছেন, তা-ও জানা যাচ্ছে না।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে খুলনার কয়রায়—১৩৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও টেকনাফে যথাক্রমে ৭৩ ও ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সাগরের সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চল ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলের অন্তত ১১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এসব অঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়ে আছেন এখনো। এসব জেলার মধ্যে আছে কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ,লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ , সিলেট।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, মৌসুমি বায়ু এখনো সক্রিয়। আর এর প্রভাবেই মূলত এখন বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটি আগামীকাল স্পষ্ট হতে পারে।
এদিকে আজ সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ মেঘলা। গতকাল রাত থেকে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। আজ রাজধানীতে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
সিনপটিক অবস্থা বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজকালের খবর/এমকে