কঠোর লকডাউনের আগে বৈশাখ আর ঈদের কেনাকাটা এখনই শুরু হয়েছে। রাজধানীর প্রায় সব মার্কেট, বিপনিবিতান, এমনকি পাড়া-মহল্লায় কেটাকাটার হিড়িক পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। করোনারও তাই পোয়াবারো। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে দিন দিন দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলেও তা যেন নাড়া দিচ্ছে না সাধারণ মানুষের চেতনায়। ভিড় ঠেলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বিভিন্ন দোকানে ছুটছেন ক্রেতারা। অনেকের মুখে মাস্ক নায়, আবার অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও উধাও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। গাদাগাদি করে কার আগে কে কিনবেন পছন্দের পোশাক বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী, চলছে যেন তারই প্রতিযোগিতা। শপিংমল খোলার দ্বিতীয় দিনে শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর ফুটপাত ও বিপণিবিতানে বাড়তে থাকে ক্রেতাসমাগম। সময় যত গড়িয়েছে ক্রেতার চাপে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি। মার্কেটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল থাকলেও তা ব্যবহারে চরম অনীহা দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। আবার বিপণিবিতানের ভেতরে মাস্ক ছাড়া দেখা যায় বিক্রয় কর্মীদেরও। ক্রেতাদের অনেকেরই দাবি, অনেকটা বাধ্য হয়ে এসেছেন কেনাকাটা করতে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ রোধে ১৪ তারিখ থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিক্রেতাদের মধ্যে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একাধিক মার্কেট সরেজমিন দেখা গেছে, কারো মুখে মাস্ক আছে তো, কারো মুখে নেই, সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, গায়ে গা ঘেঁষে মানুষ কেনাকাটা করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে যেন ঈদের আগে চাঁদরাত। এছাড়াও সরকার ঘোষিত সাত দিনের ‘কঠোর বিধিনিষেধ’-এর আজ যে ষষ্ঠ দিন চলছে তা দেখে ঘুণাক্ষরে বোঝার উপায় নেই। এর জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে মিরপুর ও উত্তরার বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা যায় শপিংমলগুলোতে। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের কোনও মনিটরিং ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই। পাওয়া যায়নি কোনও সিকিউরিটি গার্ড। আর মার্কেটের ভেতরেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষের কোনও তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
এই মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড পান্না বলেন, শুক্রবার মার্কেট খুললেও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা মার্কেট থেকে করা হয়নি। যদি করা হতো তাহলে আমার নিজেরও উপকার হতো। মার্কেট কর্তৃপক্ষ এসব জিনিসের ব্যবস্থা না করায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের মালিক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনগণের ওপর দোষ চাপিয়ে বলেন, জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এছাড়া লোকজনও মার্কেটে কম আসছেন।
মিরপুর নিউমার্কেট গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটের প্রবেশমুখে নেই কোনও জীবাণুনাশক যন্ত্র কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। মার্কেটের সিকিউরিটি ইনচার্জ মহিবুল আলাম বলেন, মার্কেট খোলার পর থেকে হাত ধোয়া স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশক কোনও যন্ত্র এখানে নেই। তবে বিভিন্ন শোরুমগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের কিছু দেওয়া হয়নি। নেই শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র কিংবা স্যানিটাইজার।
তবে কিছু কিছু মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে দেখা গেছে। বসুন্ধরা সিটির প্রবেশের মুখেই রয়েছে লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। সেখান থেকে হাত ধুয়ে জীবাণুনাশক ট্যানেল পেরিয়ে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের শরীরের তাপমাত্র মাপছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এ পরীক্ষায় পাস করতে পারলেই আবার হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে প্রবেশ করানো হচ্ছে আগত সবাইকে। এ বিষয়ে বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শপিংমলগুলোর কাছে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বসুন্ধরা সিটি রোল মডেল। অন্যান্য শপিংমলে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়টি অনুকরণ করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিং মল খুলে দেওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারাও। ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা মার্জিয়া মাহবুব বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ, এ সময় মার্কেট বন্ধ রাখলে কেনাকাটা করা কঠিন। কারণ অনলাইনে পণ্যটি দেখে, ট্রায়াল দিয়ে কেনা যায় না।
উল্লেখ্য, এর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেয় সরকার। তবে ওইদিনই জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিন পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা হবে লকডাউন। লকডাউনের বিষয়ে আজ রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এবারের লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি। এদিকে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের লকডাউনের সুপারিশ করেছে।এনএমএস।