হলুদ রঙের ফুল সূর্যমুখী। অবয়বে দেখতে সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই এর নাম সূর্যমুখী। সূর্যমুখী থেকে তৈরি হয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তেল। এখন গ্রামবাংলার মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপ মেলেছে সূর্যমুখী। মনকাড়া সুন্দর ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। হলুদ রংয়ের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সুর্যের দিকে। হরেক বিপর্যয়ের মাঝেও সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যের হাসিতে হাসছে বাংলার কৃষকরা। এই হাসি যেন কৃষকের হৃদয় উৎসারিত বাঁধভাঙ্গা হাসি, প্রাণের উচ্ছ্বাস। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, অতি সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। সূর্যমুখীর কোনো কিছুই ফেলনা নয়। বীজ থেকে তেল হয়। এই তেল মানবদেহের জন্য খুব উপকারি। মাছ ও পশুখাদ্যের জন্যে খৈল কাজে লাগে। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি লাভ হওয়ায় কারণে ধীরে ধীরে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে। বহুমুখী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট তৈলজাতীয় ফসল। বিদেশি এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। বিশ্বে এ ফুলের স্থান চতুর্থ। বিশ্ববাজারে সয়াবিনের পর সূর্যমুখী স্থান দখল করে নিয়েছে। রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে সূর্যমুখীর আবাদ হয় বেশি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও এ ফুল চাষ বেড়ে চলছে। এ ফুল কেবল অপার সৌন্দর্যই নয়, অর্থকরী ফসল হিসেবেও এর চাহিদা রয়েছে কৃষি অর্থনীতিতে। জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায়নি। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে জেলার আট উপজেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হাওরাঞ্চলে ধান চাষ খুব একটা লাভজনক নয়। ধান চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার ধান পাওয়া যায় না। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা করছেন তারা।
সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে সাত মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। উপজেলার সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর, রঙ্গারচর, মোল্লাপাড়া ও গৌরারং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন কৃষকেরা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নে ও সলুকাবাদ ইউনিয়নে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার রামপুর, শাহপুর, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ২০ বিঘা জমিতে এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। ছাতক উপজেলায় কালারুকা ইউনিয়নে, গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও, নোয়ারাই ইউনিয়নে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন ও ভাতগাঁও ইউনিয়নে ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।
খাটো নতুন জাতের বারি-৩ সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকপর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। মানবদেহের জন্য উপকারী লিনোলিক এসিড সমৃদ্ধ, হƒদরোগ ও ক্যানসার প্রতিষেধক, নারীদের বন্ধ্যত্ব দূরীকরণ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য অধিক উপকারী বারি সূর্যমুখী-৩। এ জাতটি সংগ্রহ করতে কৃষকরা এখন ভিড় জমাচ্ছেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটিতে। উন্নতমানের শতভাগ নিরাপদ সূর্যমুখীর এ জাতটি আগামী বছরে কৃষকপর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈলবীজ কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে উন্নত জাতের বারি-৩ নামের এ সূর্যমুখী ফুলের জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা তাদের তত্ত্বাবধানে জাতটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বারি-৩ সূর্যমুখী ফুলের ট্রায়াল শুরু হয়। এক বছর ধরে জাতটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে ব্যাপক সফল হয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের মতে, খাটো জাতের এ রোগ প্রতিষেধক গুণসম্পন্ন সূর্যমুখীর জাতটি কৃষকপর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারলে দেশে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ভোজ্যতেল উৎপাদনে ব্যাপক সহায়ক হবে।
বাংলাদেশে রান্নায় কম-বেশি ছয় ধরনের ভোজ্যতেল ব্যবহৃত হয়। চার দশক আগেও সরিষা ছিল প্রধান ভোজ্যতেল। নব্বই দশক থেকে পাল্টে যেতে থাকে তেলের ব্যবহার। ধীরে ধীরে প্রধান ভোজ্যতেল হিসেবে জায়গা করে নেয় সয়াবিন ও পামতেল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা ৫২ শতাংশ চলে পামতেল। বাজারে ৩৮ শতাংশ অংশীদারি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সয়াবিন তেল। সরিষার তেল ও ধানের কুঁড়ার তেল মিলে নয় শতাংশ বাজার দখল করে নিয়েছে। পঞ্চম অবস্থানে আছে সূর্যমুখী তেল। এই তেলের অংশীদারি দশমিক দুই শতাংশ। ভোজ্যতেলের বাজারে সূর্যমুখী তেলের অংশীদারি খুবই সামান্য। সয়াবিনের চেয়ে দাম দ্বিগুণের কম-বেশি হলেও এই তেলের চাহিদা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি হারে। গত পাঁচ বছরের আমদানির তথ্য অনুযায়ী, বছরে গড়ে ৩৭ শতাংশ হারে বাড়ছে সূর্যমুখী তেল আমদানি। যেখানে একই সময়ে সয়াবিন ও পামতেলের চাহিদা বাড়ার হার সাড়ে সাত শতাংশের মতো। সুস্থ থাকার জন্য মানুষের খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন ঘটছে, তারই প্রভাব পড়েছে ভোজ্যতেলের বাজারেও। এক দশক আগেও সূর্যমুখী তেলের বোতল দেখা যেত সুপারশপ আর অভিজাত দোকানের তাকে। শহরের অভিজাত শ্রেণি ছিল এই তেলের মূল গ্রাহক। এখন শহরে বাড়ির পাশের দোকানের তাকেও ঠাঁই পাচ্ছে এই তেল। স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে অভিজাত শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে রান্নার তালিকায় রাখছেন এই তেল। প্রচলিত তেলের চেয়ে হৃদরোগে ঝুঁকি কমায়-পুষ্টিবিদদের এমন পরামর্শেও রান্নার তেল হিসেবে তা জায়গা করে নিচ্ছে। নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়ে বেড়ে যাচ্ছে এই তেলের চাহিদা। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে বোতলজাত সূর্যমুখী তেল আসছে আটটি দেশ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে ইতালি, মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকে। গত অর্থবছর বন্দর দিয়ে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয় ৫৪ লাখ কেজি বা ৫৯ লাখ লিটার। পাঁচ বছর আগে আমদানি হয় প্রায় ১৯ লাখ কেজি বা ২১ লাখ লিটার। এ হিসাবে প্রায় ৪৬ কোটি থেকে বাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য, গত মৌসুমে বিশ্বে ২০ কোটি টন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে সূর্যমুখী তেলের পরিমাণ এক কোটি ৯৭ লাখ টন। এর অর্ধেকের বেশি উৎপাদিত হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়।
বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের পতিত জমিতে এবার সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনাবাদি জমিতে অল্প খরচে অধিক ফলন হওয়ায় সূর্যমুখীর চাষে দিন দিন উৎসাহ বাড়ছে কৃষকদের। বিস্তীর্ণ ভূমিতে ছেয়ে থাকা আর এরই ধারাবাহিকতায় এবারের মৌসুমে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের প্রায় ৫০০ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী চাষে সেচ লাগে দুই থেকে তিনবার। এগারো থেকে বারো হাজার টাকা খরচে প্রতি একর জমিতে ২৫ থেকে ৩০ মণ সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যায়। মণ প্রতি বীজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়। যা বিক্রি করে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকছে চাষিদের। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত মোড়লগঞ্জের কৃষকরা।
বেলে দো-আঁশ মাটিতে সূর্যমুখীর উৎপাদন ভালো হওয়ায় মোড়লগঞ্জে তিন শতাধিক কৃষক এবার লাভবান হবে বলে জানালেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় বারি সূর্যমুখী-২ (উপসী জাত) চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। আর মনকাড়া এই ফুল দেখতে ভিড় করছেন সৌন্দর্য্য প্রেমীরা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই পুরো বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। সবার নজর পরে সূর্যমুখী বাগানে। যতোদূর চোখ যায় দেখে মনে হয় বিশাল আয়তনের হলুদ এক গালিচা। চোখে পড়ে শুধু সূর্যমুখী ফুল। আর এই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মনোরম দৃশ্য স্মৃতির পাতায় বন্দি করছেন অনেকেই। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফুটে থাকা এই ফুল দর্শনার্থীদের টানছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী বাগানে আসতে শুরু করেছে।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলার লবণাক্ত পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষে সফলতা এসেছে। ফলে উৎকৃষ্টমানের তেলের টাহিদা পূরণের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প (এসআরডিআই অঙ্গ) এর আওতায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রে রবি মৌসুমে ডিবলিং পদ্ধতিতে সূর্যমুখী চাষের গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। এখানে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমন ধান কর্তনের পর ভিজা মাটিতে সূর্যমুখীর বীজ ডিবলিং পদ্ধতিতে বপণ করা হয়েছে। এরপর চারা গাছের গোড়া বেঁধে সার প্রয়োগ করা হয়েছে। গবেষণায় তিনটি জাত ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয়, বারি সূর্যমুখী-২ এবং হাইসান-৩৩ এই তিনটি জাতের সবকটিতেই ফুল ও ফল ধরেছে। এগুলোর মধ্যে হাইসান-৩৩ জাতের ফলন ভালো হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জাতের সূর্যমুখী বীজ কাটা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন গবেষণা কর্তৃপক্ষ।
লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মতে, সূর্যমুখী একটি লবণসহিষ্ণু ফসল। ফলে লবণাক্ত এলাকায় সূর্যমুখী চাষের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ জমি পড়ে থাকে। মাটি ও পানিতে লবণ থাকায় সহজে অন্য কোনো ফসল ফলানো কঠিন। সেখানে বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে দুটি সেচ দিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করলে পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট তেল ফসল হওয়ায় মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী সূর্যমুখী তেলের চাহিদা পূরণ হবে। এই প্রযুক্তি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উৎসাহী করা প্রয়োজন।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের লবণাক্ত জমিতে বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। এতে সুবর্ণচর উপজেলার চর আমান উল্যাহ, মোহাম্মদপুর, পশ্চিম চরবাটা, চর জব্বার, চর জুবলী ও চর ওয়াপদাসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এখন পরিপক্ব সোনালী সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। কিছুদিনের মধ্যেই এ ফসল কাটা শুরু হবে। এতে স্বল্প খরচে বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মূলত লবণসহিষ্ণু এ ভোজ্য ফসল আবাদে দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। কৃষি বিভাগ বলছে, এতে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি পূরণ হবে স্থানীয় সূর্যমুখী তেলের চাহিদা। মাঠের পর মাঠ ছেয়ে আছে হলুদের আভায়। যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই হলুদের ছড়াছড়ি। চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর এক অপরূপ সৌন্দর্য। রাস্তার দুপাশের মাঠের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায় ভোজ্য ফসল সূর্যমুখীর বাহারি শোভায়। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সূর্যমুখী ফুলের চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে ২৬৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর উৎপাদন হবে বলে মনে করেন সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এই জেলায় গত কয়েক বছরে সূর্যমুখীর চাষ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলেও চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় শত হেক্টরের বেশি জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। চাষিদের এই চাষে আকৃষ্ট করতে এসব ক্ষেতে গ্লোব এগ্রো. বিনা মূল্যে জমি চাষ ও বীজ সরবরাহ করছে এবং চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফুলের বীজ সংগ্রহ, রোদে শুকানো এবং তেল তৈরির কলাকৌশল হাতেনাতে শিখিয়ে দিচ্ছে। অন্য দিকে তাদের তথ্য মতে তাদের উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষের জন্য ‘অস্ট্রেলিয়ান এইডের’ সহায়তায় ‘কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা প্রোগ্রামের’ আওতায় এ বছর কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর বেসরকারি সংস্থা গ্লোবের সার্বিক সহযোগিতায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য ও পরামর্শে বাম্পার ফলন পাবেন কৃষকরা।
লেখক : কৃষি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
আজকালের খবর/আরইউ